জাতিসংঘ সতর্কবার্তা হিসেবে বলছে, সারা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে পরবর্তী ছয় মাসে প্রতিদিন প্রায় ৬০০০ এর বেশি শিশু মারা যাবে।
জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মা ও শিশুর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা (যেমন- পরিবার পরিকল্পনা, জন্ম ও প্রসব পরবর্তী যত্ন, এবং টিকা দান) ব্যাহত হলে পরবর্তী ছয়মাসে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুবরণ করবে। এবং এর সংখ্যা হবে ১.২ মিলিয়ন।
বুধবার ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই অনুমিত চিত্র শিশু মৃত্যুহারের গত এক দশকের সফলতাকে পিছিয়ে আনতে পারে। ইউনিসেফ ব্রিটেনের নির্বাহী পরিচালক সাচা দেশমুখ বলছেন, ‘‘এই মহামারীটি আমাদের সকলের সুদূরপ্রসারী পরিণতি ঘটাচ্ছে। তবে নিঃসন্দেহে এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বব্যাপী শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় এবং জরুরি সঙ্কট মোকাবেলার সময়।” তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে শিশুদের জীবনব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে। তাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে এবং খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ব্রিটেনের মতো দেশে শিশুরা হামের প্রকোপের মুখোমুখি হচ্ছে। পাশাপাশি শারীরিকভাবে দুর্বল শিশুদের ঝুঁকি বাড়ছে।’’
যেসব দেশের স্বাস্থ্যখাত দুর্বল সেসব দেশে চিকিৎসেবায় করোনাভাইরাস কিভাবে প্রভাব ফেলছে তা এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। যেমন- লকডাউনের কারণে অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে না পারায় এবং সংক্রমণের ভয়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সবাই সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।
আরেকটি পর্যালোচনা করা হয়েছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোর উপরে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, যদি স্বাস্থ্যসেবা ১৫% হারে কমে যায় তাহলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার বেড়ে দাঁড়াবে ৯.৮% এ; যা সংখ্যায় হবে দিনে ১৪০০ জন। এবং নবজাতকের মৃত্যুহার বেড়ে দাঁড়াবে ৮.৩% এ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা ৪৫% কমার বিপরীতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুূহার বাড়বে প্রতিমাসে প্রায় ৪৪.৭% এবং নবজাতকের ক্ষেত্রে তা বাড়বে ৩৮.৬%। যদি রুটিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয় এবং সেই সাথে খাদ্যসংকট দেখা দেয় তাহলে মা ও শিশু মৃত্যুহার ভয়ানকভাবে বেড়ে যাবে।
ইউনিসেফের জর্ডান প্রতিনিধি তানিয়া চাপুইসাত বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানকার মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। ছয় সপ্তাহ আগে লকডাউন শুরু হওয়ায় এবং সীমান্ত বন্ধ থাকায় প্রায় ১০ হাজার সিরিয়ান চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,‘‘শিশুরা ঠিকমত টিকা পাচ্ছে না এবং যেসব নারীর সিজারিয়ান হওয়ার কথা তাদের অনেকের তা পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আমরা অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। কিন্ত সৌভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।”
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং উগান্ডা। ইউনিসেফ বর্তমানে দেশগুলোতে তাদের সাহায্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
দি গার্ডিয়ান অবলম্বনে লিখেছেন: মুমতাহিনা নুরজাহান, ৩য় বর্ষ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।