অনেক সময় নতুন কোনো জায়গায় গিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। নতুন অচেনা মানুষ দেখে কী বলব না বলব, কীভাবে শুরু করব—এই সংশয়ে পড়েন অনেকেই। অন্যরা কী ভাবতে পারে, কিংবা আপনিই বা কী বলবেন, তা নিয়েও থাকে বেশ দুশ্চিন্তা। ফলাফল: চুপচাপ থাকা এবং নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরিতে জড়তা অনুভব করা।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনের লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক আচরণ বিশ্লেষক নাসরিন জাহান বলেন, ‘খুব সহজে আমরা নতুন-অচেনা মানুষের সঙ্গে গল্প শুরু করতে ইতস্তত বোধ করি। অথচ নতুন মানুষের সঙ্গে গল্প করার দক্ষতা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের পরিচিতি বেশি থাকে আর পেশাজীবনে দ্রুত সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। হার্ভার্ড বিজনেজ রিভিউ-এর জুলাই ২০১৭ সংখ্যার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেশাজীবনে ৪০ বছর বয়সের আগে যাঁরা নির্বাহী দায়িত্বে আসীন হন, তাঁদের ৮৪ শতাংশই নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সঙ্গে দ্রুত মিশে যেতে পারেন। টুকরো টুকরো কথা দিয়েই তাঁরা নতুন পরিবেশকে নিজের দিকে নিয়ে আসতে পারেন।
টুকরো কথা শিখুন
নতুন পরিবেশে কোন কথা দিয়ে শুরু করা যায় বা কীভাবে গল্প শুরু করা যায়, এই বিষয়ের প্রশ্ন গুগলে বেশ খুঁজতে দেখা যায়। কানাডীয় উদ্যোক্তা ও লেখক পল কার্লেটন গল্প জমানোর কিছু উপায় লিখেছেন।
১. শুরু করুন নিজেকে দিয়ে
নিজের কোনো গল্প দিয়ে আপনার কথা শুরু করতে পারেন। রাস্তায় আপনার সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা কিংবা গতকালের বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা নিয়ে কথা বলে নতুন মানুষকে আপনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন। অনেকে শুরুতেই প্রশ্ন করে নতুনদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিতে চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে অনেকেই আপনার সঙ্গে গল্প করতে বা কথা শুরু করতে উৎসাহবোধ করবেন না। তাই নিজের গল্প দিয়েই শুরু করুন।
২. কথা বলার ধরনে মনোযোগ দিন
আপনার কথা যেন বিরক্তিকর মনে না হয়, সেদিকে নজর দিন। আমরা বেখেয়ালে বিরক্তিকর আচরণে কথা বলি, যা অন্যরা ভালোভাবে মেনে নিতে পারেন না। নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার কথা বলার ধরনে কী কী দুর্বলতা আছে।
৩. কথা বলা শেষ করতে শিখুন
কথা শুরু করে দিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আর তা শেষ করতে পারি না। এতে শ্রোতা আপনার ওপর বিরক্ত হন, যা আপনার অগোচরেই হয়। চেষ্টা করুন গল্প শুরু করে গল্প শেষ করতে। যদি নিতান্তই কথা শেষ করতে না পারেন, তাহলে দুঃখ প্রকাশ করে বিদায় নিন।
৪. নতুন কিছু বলুন
গৎবাঁধা গল্প, বেরসিক বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলুন। ব্যতিক্রমী গল্পের বিষয় খুঁজে বের করুন, কিংবা কোনো বই থেকে জেনেছেন এমন কোনো অপ্রচলিত গল্প দিয়ে শুরু করুন। কৌতুক বা হাস্যরসের কোনো কথা দিয়ে নতুন পরিচয়ে গল্প না করাই ভালো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সব কৌতুকই কিন্তু কোনো না কোনোভাবে মানুষ জেনে যায়।
৫. চার বিষয়ে গুরুত্ব
নতুন মানুষের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিতে পরিবার, পেশা, বিনোদন আর স্বপ্ন নিয়ে কথা বলুন। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়কে খেলা হিসেবে কল্পনা করুন। আপনি এই চারটি বিষয় কথা বললে একটি স্তর পাড়ি দেবেন তা কল্পনা করুন। সাধারণ হিসেবে আমরা মানুষ প্রথম পরিচয়ে এই চার বিষয় নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নতুন মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে এই চারটি বিষয়ে খেয়াল করুন।
৬. শুনতে থাকুন
যাঁরা মিশুক প্রকৃতির মানুষ, তাঁদের দিকে খেয়াল করুন। তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুনতে দারুণ পছন্দ করেন। আপনি যত বেশি মনোযোগী শ্রোতা হবেন, তত বেশি সাধারণ মানুষকে আপনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারবেন।
৭. চোখের দিকে তাকানো শিখুন
গল্পের সময় আমরা অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করি। এ ধরনের আচরণ শ্রোতাকে বিব্রত করে তোলে, তাই চেষ্টা করুন চোখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনতে ও বলতে।
৮. অন্যকে গুরুত্ব দিন
আপনি গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়টি কখনোই আপনার আচরণ ও কথাবার্তায় তুলে ধরবেন না। আপনি যে নতুন মানুষটির সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। বিশ্বাস করুন, আপনি যখন অন্যদের গুরুত্ব দিতে শিখবেন, তখন কিন্তু আসলে আপনি আপনার গুরুত্বই বাড়াচ্ছেন।
৯. বেশি কথা না বলাই কিন্তু বেশি!
ধীরে ধীরে গল্প জমাতে খুব কম কথা বলেন যাঁরা, তাঁরাই কিন্তু সফল হন। কম কথা বলাই গল্প জমায় আর ভাব বাড়ায়। কথা কম বলে বেশি প্রভাব বাড়াতে শিখুন। কম কথাই কিন্তু বেশি এখন!
কৃতজ্ঞতা- দৈনিক প্রথম আলো