ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতোদিন ইন্টারনেট সংযোগের তারবিহীন ব্যবস্থার সর্বশেষ সংস্করণ ছিল ওয়াইফাই। প্রযুক্তির এই যুগকে আরো সহজ করে দিতে আসছে ওয়াইফাই সিক্স নামের নতুন একটি সংস্করণ। এই প্রযুক্তি সমর্থন করার মতো নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার তৈরি হয়ে গেছে। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াই-ফাই সিক্স সমর্থন করতে পারে এমন পণ্য উৎপাদনও শুরু করে দিয়েছে।
ওয়াইফাই প্রযুক্তি সমর্থিত ডিভাইসগুলোকে সার্টিফিকেট দেয় বা সঠিক মান নিশ্চিত হলে প্রত্যয়ন করে ‘ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত সোমবারই নতুন এই সংস্করণ আনার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্স জানায়, ডিভাইস প্রস্তুতকারীদের ওয়াইফাই সিক্স সার্টিফিকেশন দেওয়া শুরু করবে। এর মানে এই যে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ওয়াইফাই ডিভাইসগুলোর প্রযুক্তিগত মান অনুসরণ করে পরিবর্তন আনবে। ওয়াইফাই সিক্স বলতে গেলে ওয়াইফাইয়ের মতোই। আমরা যে ওয়াইফাই অনেকদিন ধরে ব্যবহার করে আসছি ওই ডিভাইসের মতোই। কিন্তু ওয়াইফাই সিক্স দ্রুত গতিতে কাজ করে। সেই সঙ্গে আরো ভালোভাবে কাজ করবে। যে রকমভাবে মোবাইল ইন্টারনেট থ্রিজি থেকে ফোরজিতে উন্নত হয়েছে। ঠিক তেমনই বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে ওয়াইফাই প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে।
এছাড়াও আমরা বর্তমানে যে ওয়াইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গতিসম্পন্ন হবে ওয়াইফাই সিক্স। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড় ডাউনলোডের গতি প্রায় ১০০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এরকম গতি হতে পারে বিশ্বর অন্যান্য দেশেও। আগের ওয়াইফাই সংস্করণে অনেকগুলো ডিভাইস দিয়ে একসঙ্গে কাজ করলে গতি কমে যেতো। কিন্তু বর্তমানে যে সংস্করণটি বাজারে আসতে চলছে এটিতে এরকমটা হবে না। এটিতে অনেকগুলো ডিভাইস সংযোগ এক সঙ্গে কাজ করলেও গতির কোনো হেরফের হবে না। বলা হচ্ছে, এই সংস্করণটি স্টেডিয়ামে কিংবা অন্যকোনো জনবহুল স্থানে একই গতিতে ব্যবহার করা যাবে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস টেন এবং আইফোন ইলেভেনে সমর্থন করবে।
ওয়াইফাই সিক্স দুর্দান্ত গতিতে কাজ করতে পারবে। এটি ১০০০ এমবিপিএস গতিতে ডাউনলোড করতে পারবে। কিন্তু অধিকাংশ বাড়ির ডিভাইসে এটি কাজ করবে না। কারণ ওয়াই-ফাই সিক্স ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটের পুরো নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। বদলাতে হবে অগের সব সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার। এর জন্য ওয়াইফাই সিক্স সমর্থিত রাউটার ব্যবহার করাও বাধ্যতামূলক। আবার আইওটি ডিভাইসগুলোকেও এই প্রযুক্তির উপযোগী হতে হবে। এটি পুরোনো ডিভাইসে সম্ভব নয়, কারণ এর জন্য হার্ডওয়্যারে পরিবর্তন প্রয়োজন। পরিবর্তন না করলে আপনি ওয়াইফাই সিক্স ব্যবহার করবেন ঠিকই কিন্তু বুঝবেন না আসলে আপনি কী ব্যবহার করছেন। তাছাড়া, ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো :
রাউটার আপগ্রেড : পুরনো অনেক রাউটারই ধীরগতিতে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। আর এ সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রয়োজন দ্রুতগতির রাউটার। এক্ষেত্রে আপনার রাউটারের গতি দেখে নিন। এটি যদি আপনার ইন্টারনেটের লাইনের তুলনায় কম গতির হয় তাহলে রাউটার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।
রাউটারের অবস্থান : ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর সবচেয়ে কাছাকাছি স্থানে কোনো বাধা ছাড়া রাউটার রাখার চেষ্টা করুন। বাড়িতে বহু ভারি ফার্নিচার থাকলে সেগুলোর আড়ালে নয় বরং সেগুলোর উপরে রাউটার বসান। এতে বাধামুক্তভাবে রাউটার আপনার ডিভাইসগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। এছাড়া বাড়ির এক প্রান্তে না রেখে তা বাড়ির মাঝামাঝি স্থানে বসানোই যুক্তিসঙ্গত।
চ্যানেল পরিবর্তন : আপনার রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি অন্য যন্ত্রপাতির ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে কনফ্লিক্ট করছে কি না, তা জেনে রাখুন। আপনার রাউটার যদি ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে তাহলে তা কর্ডলেস ফোন, মাইক্রোওয়েভ, ব্লুটুথ, সিসিটিভি ইত্যাদির সঙ্গে কনফ্লিক্টের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে ৫ গিগাহার্জ কিংবা ভিন্ন কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
বাধা এড়ান : রাউটারের সঙ্গে আপনার ডিভাইসের মাঝে দ্রুত যোগাযোগের পথে বহু জিনিসই বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এসব বাধার মধ্যে রয়েছে ধাতব দরজা, অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো, ওয়াল ইনসুলেশন, পানির ট্যাংক বা অ্যাকুরিয়াম, আয়না, হ্যালোজেন লাইট, গ্লাস ও কংক্রিট। এ ধরনের বাধাগুলো যেখানে সবচেয়ে কম সেখানেই প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা রাউটার স্থাপন করুন।
সফটওয়্যার আপডেট : রাউটার ও ইন্টারনেট সরবরাহের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়মিত আপগ্রেড হয়। একটু খেয়াল রেখে রাউটার ও মোবাইল ডিভাইস বা পিসির সফটওয়্যার আপডেট করে নিলে ইন্টারনেটের ভালো গতি পাওয়া যেতে পারে।
এক্সটেন্ডার : নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য এক্সটেন্ডার পাওয়া যায়। আপনার ওয়াইফাই রাউটার থেকে দূরে কোথাও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে এক্সটেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতিবেশী : আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ কোনো প্রতিবেশী ব্যবহার করলে এতে আপনার ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে। তাই প্রতিবেশীদের থেকে সাবধান। অবশ্য কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে একটি গতিশীল ইন্টারনেট নিয়ে তা শেয়ার করে ব্যবহার করাও একটি ভালো বুদ্ধি।
নিরাপত্তা বাড়ান : ওয়াইফাই ইন্টারনেটের জন্য WEP বাদ দিয়ে কিছুটা নিরাপদ WPA/WPA2 ব্যবহার করুন। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এছাড়া নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তনও প্রয়োজনীয়।
গোপন রাখুন : ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে আপনার নাম ও ডিভাইসের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তার বদলে সাংকেতিক নাম ও অত্যন্ত গোপনীয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
টিন ফয়েল ব্যবহার করুন : ওয়াইফাই রাউটারের অ্যান্টেনার বাইরে ডিশ অ্যান্টেনার মতো বা অন্য কোনো উপায়ে টিনের ফয়েল ব্যবহার করে সিগন্যাল বাড়ানো সম্ভব। অন্য উপায়গুলো কাজ না করলে এটি ব্যবহার করতে পারেন।