নিজেদের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের একশ’ বছরপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী উৎসব পালন করছেন বান্দরবানের বম নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা। শুক্রবার রাতে রুমা উপজেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করেন বম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা রেভারেন্ড কামখুপ বম।
‘বমরাম গসপেল সেন্টেনারি’ নামক উৎসবটিতে বান্দরবান, রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত বম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা যোগ দিয়েছেন। এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, মায়ানমার, অষ্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী অতিথিরাও।
উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য জর্জি লনচেও জানান, বম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ আগে প্রকৃতিপূজারী ছিলো। ১৯১৮ সাল থেকে তারা প্রথম খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হতে শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ধর্মগ্রহণের ১শ’ বছরপূর্তিতে উৎসব করার কথা থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সেটি এ মাসের ১৮ তারিখে পিছিয়ে আনা হয়।
উদযাপন কমিটির সভাপতি রেভারেন্ড পেকলিয়ান বম জানান, বম সম্প্রদায় খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃতিপূজা থেকে একেশ্বরবাদী ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। এতে তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবনযাপনের রীতি উন্নত এবং আধুনিক হয়েছে। ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত যাযাবর জীবন থেকে তারা সমাজিক শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত হয়েছে। গত একশ’ বছরে ধর্মীয় কারণেই তাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
শনিবার সকালে উৎসবের মূল পর্বে অতিথি হিসেবে যোগ দেন, রুমা জোনের সেনা কর্মকর্তা মেজর মাসুদ রায়হান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য লয়েল ডেভিড বম, জেলা পরিষদের সদস্য সিংইয়ং ম্রো, জোয়েল বম, ভারতের মিজোরাম রাজ্যের খ্রিস্ট ধর্মীয় নেতা রেভারেন্ড সি. সাংজোয়ালাসহ জেলার বিশিষ্টজনেরা।
উৎসবটিতে যিশু খ্রিষ্টের বাণী প্রচার, ধর্মীয় কীর্তন, সমবেত প্রার্থণা, বমদের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ নৃত্য, শিং নৃত্যসহ বিভিন্ন লোকজ নাচ-গানের আয়োজন করা হয়। এতে যোগ দেন বান্দরবানসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ৫ হাজার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বম নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। তিন দিনব্যাপী উৎসবটি আজ রোববার রাতে শেষ হবে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার ভাইরেলহ গ্রামে প্রথম খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার শুরু করেন ধর্মীয় নেতা রেভারেন্ড এডউইন রোলেন্ডস। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বম জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার সদস্যের সবাই এখন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী।