বাংলা সিনেমায় প্রায়ই দেখা যায় নায়কের দারিদ্র্যকে উপহাস করে নায়িকার বাবা বলছেন, ‘তেলে আর জলে কখনো মেশে না।’ তাই শুনে ভগ্নহৃদয় নায়ক বেচারা লাল পানি খেয়ে কেঁদেকেটে কূল পায় না।
কিন্তু দিন বদলেছে। নায়িকার বাবার চোখের ওপর চোখ রেখে নায়কেরা এখন বলতে পারেন, ‘তেল আর জলও মিশে যায়, চৌধুরী সাহেব!’ কেননা, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা প্রমাণ করেছেন, খুব বেশি পরিমাণ শক্তির অপচয় ছাড়া সহজেই তেলের সঙ্গে জলকে মেশানো সম্ভব!
তেল আর জলের না মেশার ব্যাপারটি আমরা দেখে আসছি অনাদিকাল থেকে। বাংলা ভাষায় তাই প্রবাদ রয়েছে, ‘তেলে–জলে মেশে না।’ এ কথার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা হলো পানি একটি পোলার অণু। ‘পোলার অণু’ মানে যার একপ্রান্তে পজিটিভ চার্জ ও অন্য প্রান্তে নেগেটিভ চার্জ থাকে। এ অণু শুধু তার সমগোত্রীয় অণুর সঙ্গেই মেশে। পোলার অণু নয়—এমন কোনো অণুর সঙ্গে পানির অণু মিশবে না। তেল ‘পোলার অণু’ নয়, তাই সর্বসম্মত বিশ্বাস ছিল, তেল আর জল কখনো মিশবে না।
কিন্তু এমআইটির গবেষকেরা এমন এক পথ বের করেছেন, যা অনুসরণ করে তেলের সঙ্গে মেশানো সম্ভব এবং এই মিশ্রণ কোনো রকম ঝাঁকানো ছাড়াই টিকে থাকবে অনেকক্ষণ। ওষুধ তৈরি, কসমেটিকস এবং খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে এই উদ্ভাবন কাজে লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
খানিকটা ‘সারফাকট্যান্যান্ট’ (সাবানের মতো যৌগ) সমৃদ্ধ গোসল করার তেল নিয়ে গবেষণা করেছেন এমআইটি উদ্ভাবকেরা। প্রথমে এই তেলের উপরিভাগে বাতাসের মধ্য জলীয় বাষ্পকে বাষ্পীভবন করছেন তাঁরা। যার ফলে তেলটির উপরিভাগে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমা হয় এবং কিছুক্ষণ পর তা তেলের মধ্যে ডুবে যায়। তেলের মধ্য ‘সারফাকট্যান্যান্ট’-এর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পানির এই ফোঁটা বাড়ানো-কমানো যায় বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ সাময়িকীতে এই উদ্ভাবন প্রকাশ করেছেন এমআইটি গ্র্যাজুয়েট ইনগ্রিড গুহ, গবেষক সুশান্ত আনন্দ এবং সহযোগী অধ্যাপক কৃপা বারানসী।
শিল্পক্ষেত্রে তেল আর জল মিশিয়ে ‘ইমালশন’ তৈরি হচ্ছে বেশ আগে থেকেই। এটা সাধারণত যান্ত্রিকভাবে ঝাঁকুনির মাধ্যমে তৈরি করা হয় নতুবা প্রচণ্ড শব্দ প্রয়োগ দ্বারা দুটি যৌগকে মেশানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘সনিকেটিং’। কিন্তু কৃপা বারানসীর মতে, এ দুটি প্রক্রিয়ার জন্যই ‘অনেক বেশি শক্তির দরকার’ বিশেষ করে পানির ফোঁটা বড় করতে অনেক বেশি শক্তির দরকার। সে তুলনায় ‘আমাদের পদ্ধতিতে শক্তি খরচ অনেক কম’—মতামত বারানসীর। সূত্র: ডেকান।