ঈদের ছুটিতে আসা বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাধ্যমে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে ব্যাপক হারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সতর্কতার পরও টানা নয় দিনের ছুটিতে পর্যটকদের মাধ্যমে স্থানীয়দের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
৯ জুলাই থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বান্দরবানে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। জেলা সদর ছাড়াও তাঁরা রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়াতে যাচ্ছেন, থাকছেনও সেসব জায়গায়।
সিভিল সার্জন কী বললেন?
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু জানান, ‘দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত বান্দরবানে ১০ জন রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ জনকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ জন, একটি উন্নয়ন সংস্থার হোস্টেলে ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২ জন।’
তিনি জানান, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজেদের জানা বা অজানায় ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে যদি অনেক লোক এখানে চলে আসেন, তাহলে তাদের মাধ্যমে বান্দরবানেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। হোটেল-মোটেল এবং যাত্রীবাহী বাসগুলোতে মশানিরোধী স্প্রে বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা হলেও পর্যটকরা সারা দিন যেসব খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন, সেইসব জায়গায় সবার পক্ষে মশা থেকে পুরোপুরি সতর্ক থাকা সম্ভব না-ও হতে পারে।’
অন্য সূত্রের খবর
বিবিসি বাংলার একটি সংবাদের সূত্রে জানা গেছে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, যদি কারো জ্বর থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির ঢাকার বাইরে ভ্রমণ করা উচিত হবে না।
“আবার এমন হতে পারে মশা কামড়েছে , ইনফেকশনটা তার শরীরের মধ্যে ছিল কিন্তু সেই মুহূর্তে জ্বরটা প্রকাশিত হয়নি।”
“পরবর্তীতে বাড়িতে যাওয়ার পরে জ্বরটা প্রকাশিত হল। সেক্ষেত্রে তিনি যেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন এবং পরীক্ষা করান যে তার জ্বরটা ডেঙ্গু জ্বর কি-না।”
যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে তাকে সবসময় মশারীর মধ্যে থাকতে হবে । এতে সেখানে যদি এডিস মশা থাকে তাহলে ঐ রোগীকে কামড়িয়ে ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে অন্যদের কামড়াতে না পারে।
কারণ যদি ঐ মশা অন্যদের কামড়ায় তাহলে তারা ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হতে পারেন, জানান মিজ. ফ্লোরা।
তিনি বলছিলেন, এটা এখন একটা বড় বিষয় যেটা সতর্ক থাকা প্রয়োজন যাতে করে ঈদ করতে যেয়ে এক জনের দ্বারা অন্যজন সংক্রমিত না হন।
বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম বলেন, ‘জরুরি সভা ডেকে পরিবহন ও হোটেল-মোটেল মালিকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। তারা নিজ নিজ আওতাধীন এলাকায় পর্যাপ্ত মশার স্প্রে ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জায়গা থেকে আসা গাড়িগুলো ছাড়ার আগে মশানিরোধী ওষুধ ব্যবহার করার জন্যে কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে।’
পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন?
বান্দরবান-চট্টগ্রাম রুটের পূরবী বাস সার্ভিসের মালিক কাজল কান্তি দাশ বলেন, ‘আমরা দু’টি ফগার মেশিন কিনেছি। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে এই মেশিন দিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করছি। এটা আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হচ্ছে।’
সেন্টমার্টিন পরিবহন বান্দরবান অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মফিজুর রহমান জানান, ‘আমরা বাস ছাড়ার আগে মশার স্প্রে ব্যবহার করছি। ঢাকা থেকে বান্দরবান এবং বান্দরবান থেকে ঢাকা উভয়মুখী বাসেই স্প্রে ব্যবহার করা হয়।’
এবারের ঈদের ছুটির এক সপ্তাহে বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, স্বর্ণ মন্দির, মেঘলা, শৈল প্রপাত, চিম্বুক এবং রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক আসবেন বলে আশা করছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। বান্দরবানের পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান ছাড়াও এসব পর্যটকের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঢাকা থেকে আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।