মাঠ প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বদলি ও পদায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারদের হাতে নাও থাকতে পারে। অতীতের মতো ফের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর সশস্ত্র হামলার পর পদায়ন ও বদলির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মধ্যে এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে কাজের চাপ কমানো এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ইউএনওদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারদের অধীনে দিয়ে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই থেকে বিভাগীয় কমিশনাররা তাদের বদলি ও পদায়ন করে আসছেন।
জানা গেছে, গত দু’বছর ধরে বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়ে ইউএনও ও এসি ল্যান্ড বদ্লি ও পদায়ন নিয়ে তদবির বেড়েছে। কোনো কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিস্বার্থে পছন্দের কর্মকর্তাকে নিজ উপজেলায় ইউএনও নিয়োগ দিতে জোর তদবির করেন। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করে ইউএনও পদায়ন করে নেওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। ওই মহল নিজেদের সুবিধা নিতে ইউএনওদের ব্যবহার করেন। অনেকটা চাপে পড়ে বিভাগীয় কমিশনাররা এ কাজ করেও থাকেন। এতে করে দায়িত্বরত ইউএনওর ওপর প্রতিপক্ষ ক্ষুব্ধ হন। আবার কোনো কোনো ইউএনও এই সুযোগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়গুলো প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে নজরে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে নতুন করে ইউএনও বদলির ক্ষমতা রদবদলের চিন্তা করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনওদের বদলি পদায়ন-সংক্রান্ত ২০১০ সালের পরিপত্রে বলা হয়, ইউএনওর শূন্য পদ পূরণের জন্য ফিটলিস্ট তৈরি করবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)। ফিটলিস্টভুক্ত ওই সব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হবে। এসব কর্মকর্তার পদায়ন ও বদলির কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিভাগীয় কমিশনাররা। এক বিভাগের ইউএনওকে অন্য বিভাগে সরাসরি বদলি করা যাবে না। কেউ অন্য বিভাগে বদলি হতে চাইলে তার নিজ বিভাগীয় কমিশনার প্রত্যাহারের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়া কোনো ইউএনওকে দুই বছরের আগে বদলি করা যাবে না। পাশাপাশি তিন বছরের বেশি কোনো কর্মকর্তাকে একই কর্মস্থলে রাখা যাবে না। তবে পার্বত্য এলাকা এবং সরকার ঘোষিত দুর্গম এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে দুই বছরের বেশি রাখা যাবে না। কোনো ইউএনওকে একই জেলার অন্য উপজেলায় বদলি করা যাবে না। কোনো কর্মকর্তাকে পাঁচ বছরের অধিক ইউএনও পদে রাখা যাবে না। ইউএনও হিসেবে যাদের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হবে তাদের তালিকা বিভাগীয় কমিশনার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এজন্য সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ত্রিশ কর্ম দিবস আগে লিখিতভাবে বিভাগীয় কমিশনারকে জানাবেন।
কোনো কারণে বা ব্যক্তিগত কারণে ইউএনওকে বদলি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে এবং তার কর্মকাল যদি দুই বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকের মতামতসহ বিভাগীয় কমিশনার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির কাছে পাঠাবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (জনপ্রশাসন) উপসচিবকে (মাঠ প্রশাসন) সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিভাগীয় কমিশনাররা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ফিটলিস্টভুক্ত নারী কর্মকর্তাদের ইউএনও পদে অধিকতর ভালো যোগাযোগ সম্পন্ন উপজেলায় পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা পরিপত্রে বলা হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট বা কালেক্টরকে তার বিচারিক প্রকৃতির কার্যক্রম বা দেওয়া কোনো আদেশের কারণে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না। সে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইউএনওদের বদলি ও পদায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারদের হাতে থাকবে কিনা এখনও তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।