সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘বর্তমান কমিশন এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। পাঁচ সিটি নির্বাচন তারা সুষ্ঠু করতে পারেনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না তা বলা যায় না। তার বক্তব্যেই বোঝা যায় অনিয়ম হবে এমন একটি স্ট্যান্ডার্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ নীতি অব্যাহত থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনও নিয়ন্ত্রিত হবে।’
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ইভিএম নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হঠাৎ করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার তোড়জোড় সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আর মাত্র দেড়মাস বাকি। এখন ইভিএম কিনে ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় কোথায়?
তিনি আরও বলেন, যে কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার সর্ম্পকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল সৃষ্টি করতে বছরের পর বছর সময় লাগে। সেখানে নির্বাচনের মাত্র চারমাস আছে। এখন কিভাবে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে। নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনার উদ্যোগকে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।
এসময় সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ইভিএম বুথে ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে সুইচ থাকবে। তিনি সুইচ টিপ দেওয়ার পর ভোট দিতে পারবেন।
এসময় যদি সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের একাধিকবার সুইচ টিপ দেন, তাহলে একজন ভোটারই একাধিক ভোট দিতে পারবেন। সুতরাং নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা না থাকলে ইভিএম মেশিন দিয়েও ভোট কারচুপি করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, এখন সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে (সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, নাগিরক সমাজের প্রতিনিধ) নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সেখানে আরো বলা হয়, সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য করণীয়সমূহ সম্পাদনের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরকারকে পরামর্শ দিতে হবে। যাতে সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকারকারী সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাক্রমে সকলে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। উক্ত সনদে নির্বাচনের পূর্বে, নির্বাচনকালে এবং নির্বাচনের পর কখন কী ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, কার কী ভূমিকা হবে, সরকার গঠন করলে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে, বিরোধী দলে থাকলে সংসদকে কার্যকর রাখার জন্য কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, সনদের শর্ত ভঙ্গ করলে কী হবে তা উল্লেখ থাকবে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।