২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পদায়ন হয় বান্দরবান জেলায়। দায়িত্বভার গ্রহণ করি ২৬ জুন। দেখতে দেখতে ২ বছর ৩ মাস পেরিয়ে গেল। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবান থেকে বিদায় নিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করি।
সময় দ্রুত চলমান। কবি-সাহিত্যিকগণ বলেছেন , ‘Time is a gypsy caravan’. বাংলা সাহিত্যে সময় নিয়ে অনেক প্রবাদ-প্রবচন রয়েছে। সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা ইত্যাদি। কীভাবে, কখন যে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ২ বছর ৩ মাস পেরিয়ে গেল তা টেরও পেলামনা।
পাহাড়ে চাকুরি একেবারে নতুন নয়। তিন পার্বত্য জেলায় চাকুরি করার সৌভাগ্য হয়েছে। পানছড়ি থেকে বাঘাইছড়ি, অতঃপর বান্দরবান জেলায়। সব মিলিয়ে প্রায় ছয় বছর। একেক পাহাড়ের বৈচিত্র একেক রকম। মানুষের প্রকৃতিগত মজ্জা ভিন্ন ভিন্ন। পাহাড়, পর্বতের গঠনশৈলী অনিন্দ্য। প্রকৃতিকে কাছে থেকে উপভোগ করার রয়েছে অবারিত সুযোগ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতানে যেমনটি বলা হয়েছে-
“কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।’’
খাগড়াছড়ির আলুটিলা, রাঙামাটির সাজেক ও বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি ও চিম্বুক পাহাড়ের সৌন্দর্য দর্শনে যে কেউ বলতে বাধ্য হবে-
“সুর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি
মেঘে মেঘে আকাশ কুসুম তুলি।“
বান্দরবান জেলায় কর্মকালীন কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি। ৪,৪৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বান্দরবান জেলায় ৭ টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি পর্যটন স্পট স্মৃতিপটে অম্লান। সময়, সুযোগ ও সাহসের ক্ষীণতায় কয়েকটি স্পট এখনো রুপকথার গল্পের ন্যায়। পাঠকরা হয়তো অতিশয়োক্তি ভাবতে পারেন, তারপরেও বলব পর্যটন স্পট, সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও বৈচিত্র্য বিবেচনায় বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের শ্রেষ্ট পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা।
বান্দরবান জেলায় যোগদানের পর থেকে তিনটি পোর্টফোলিওতে কাজ করি- শিক্ষা ও আইসিটি, ম্যাজিস্ট্রেসি ও স্থানীয় সরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে এর অনেকগুলো সবল দিক লক্ষ্যণীয়। যেমনঃ বন-বাদাড়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার কমিয়ে নিয়ে আসা ইত্যাদি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি ভয়ংকর এক অন্ধকার চিত্রও রয়েছে যা উদ্বেগজনক। মুষ্টিমেয় ভাল শিক্ষকের সাথে কিছু অখাদ্য শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। এরা শিক্ষিত বর্বর।
মাঝে মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা বক্সিং খেলায় মেতে ওঠে (নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা), কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে (থানচি উপজেলা), মানসম্মত শিক্ষার নামে শিশু পাচার (রোয়াংছড়ি উপজেলা) এর সাথে শিক্ষকদের একাংশ জড়িত। পাহাড়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে ট্রিপল প্রশাসন কাজ করে। জেলা প্রশাসন আশীর্বাদ বা অভিশাপ কিছুই করার ক্ষমতা রাখেনা। শুধু পিঠ চুলকানির কাজ করে।
বান্দরবান কালেক্টরেট স্কুলটি জেলা প্রশাসন পরিচালিত একমাত্র বিদ্যাপীঠ। তৎকালীন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক-এর নির্দেশনায় এই বিদ্যালয়টিকে কলেজে রুপান্তর করা হয়। বর্তমানে এটি বান্দরবান কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ নামে পরিচিতি। একদল দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পদাধিকার বলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। কিছু সমস্যা থাকা সত্বেও ছাত্র, শিক্ষক, অবকাঠামো, ফলাফল- এসব বিবেচনায় এটির অবস্থান জেলার শীর্ষে। আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে এসেছি, এখন অনাগতদের দায়িত্ব হলো এটাকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করা।
আইসিটির ক্ষেত্রে বান্দরবান অনেক সীমাবদ্ধতা সত্বেও এগিয়ে আছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে প্রায় ১১ টি। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আছে। দূর্গম অঞ্চলে বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ, ইন্টারনেট স্পীডের দূর্বলতা –আইসিটির অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
ম্যাজিস্ট্রেসি নিয়ে কথা বলতে গেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনার কথা চলে আসে। কারণ, ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করেই ফৌজদারি মামলাগুলোর উৎপত্তি। প্রসঙ্গত বলা যায়, ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে পরিচালিত হলেও পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলে কখনো অনুরুপ সার্ভে পরিচালিত হয়নি। পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলে ভূমির রেকর্ড তথা ভূমির নকশা ও খতিয়ান প্রস্ততের লক্ষ্যে ভূমি খতিয়ান (পার্বত্য চট্রগ্রাম) অধ্যাদেশ-১৯৮৪ (১৯৮৫ সালে ২ নং অধ্যাদেশ) প্রণয়ন করা হয়। এ অধ্যাদেশের ৩ ধারার বিধান অনুযায়ী সরকার যথোচিত মনে করলে রাজস্ব অফিসার দ্বারা পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকা বা উহার কোন অংশের জরিপ এবং ভূমি খতিয়ান প্রস্তত বা সংশোধন করার নির্দেশনা দিতে পারে। সে অনুযায়ী কিছু কিছু জায়গায় ভূমি জরিপ পরিচালিত হলে ও সমগ্র পাহাড়ে পূর্ণাংগ জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। বান্দরবান জেলা ও এর ব্যতিক্রম নয়। এ কারণে জমি সংক্রান্ত ফৌজদারি ও দেওয়ানি মোকদ্দমা ক্রমে বেড়েই চলছে। তথাপি বলা যায়, সংখ্যার বিচারে মামলার সংখ্যা সমতলের চেয়ে অনেক কম।
বান্দরবান জেলায় একটানা দু’বছরের বেশি ফৌজদারি নির্বাহী আদালত পরিচালনা ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের আগেও প্রায় দু’বছর ফৌজদারি আদালত পরিচালনা অভিজ্ঞতার ঝুলিকে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ করেছে। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর জেলা প্রশাসককে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তাঁর পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১০৭, ১৪৪, ১৪৫, ১৪৬, ১৪৭ ধারার মামলাসহ মোবাইল কোর্ট এর তফসিলভুক্ত ছোট ও বড় বেশ কিছু আইনে দায়েরকৃত মোকদ্দমার আপীল শুনতে হয়।
উল্লেখ্য যে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং কালেক্টরেটের অন্যান্য বিজ্ঞ এক্সজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। মোবাইল কোর্টের প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আপীল দায়ের করতে হয় এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত আপীল নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রেরণ করে থাকেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি রিভিশন এর বিধান রয়েছে।
স্থানীয় সরকারে কাজ করেছি একেবারে প্রান্তিক জনগণের সাথে একাকার হয়ে। দেশে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞের অভাব নেই। জানিনা, মাঠে ময়দানে কাজ করা অভিজ্ঞতা কার কত দিন। চলার পথে আমাদের জীবনে কতই না ঘটনা ঘটে। সেগুলোকে বিশ্লেষণপূর্বক নির্যাস বের করে চলার পাথেয় ঠিক করে দেন বিশেষজ্ঞরা। মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মী হিসেবে অনেকগুলো কেস স্টাডি লিখা যাবে যার সারমর্ম দাঁড়াবে অনেকটা এরকম-
১। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাই পরিষদের সর্বসেবা। তাদের একক সিদ্ধান্তে সমস্ত কাজ-কর্ম পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও সচিবগণ অনুগত থেকে বা কখনো কখনো হালুয়া রুটির ভাগ নিয়ে চুপচাপ থাকেন।
২। কতিপয় ইউনিয়ন পরিষদে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই। একই প্রকল্প ভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বছরে গ্রহণ, দুর্গম অঞ্চলে প্রকল্প গ্রহণ ও তদারকির অভাব, নিম্নমানের কাজ ইত্যাদি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া, গৃহীত প্রকল্পগুলো কতটুকু জনগুরুত্বপূর্ণ তা-ও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নসাপেক্ষ।
ইউনিয়ন পরিষদের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের বিশাল ফিরিস্তি নিয়ে হাজির হয় জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড ও আঞ্চলিক পরিষদ। উন্নয়ন না হয়ে উপায় নেই। হতেই হবে।
পার্বত্য চট্রগ্রামের উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে মোল্লা নসরুদ্দীন এর গল্পটি এ পর্যায়ে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক। একদা বাজারে গিয়ে মোল্লা খুব ভাল মাংস পেয়ে খুশি হয়ে এক কেজি মাংস নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসেই স্ত্রীকে মাংসটা ভালো করে রান্না করার নির্দেশ দিলেন। মোল্লার স্ত্রী মাংস রান্না করলেন। কিন্তু রান্না করা মাংস চেখে তার এত ভাল লাগল যে তিনি নিজেই পুরো মাংসটা খেয়ে ফেললেন। মোল্লা খেতে এসে যখন মাংস চাইলেন তখন তার স্ত্রী বললেন যে, মাংস বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে। মোল্লা জিজ্ঞেস করলেন ‘বিড়াল কি পুরো মাংসই খেয়েছে?’ মোল্লার স্ত্রী বললেন যে, পুরো মাংসই বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে। বিড়ালটা কাছেই ছিল। নসরুদ্দীন সেটাকে দাঁড়িপাল্লায় চড়িয়ে দেখলেন যে বিড়ালটির ওজন ঠিক এক সের। ‘এটাই যদি সেই বিড়াল হয়’ মোল্লা বললেন, ‘তাহলে মাংস কোথায়? আর এটাই যদি সেই মাংস হয়, তাহলে বিড়াল কোথায়?’
সব মিলিয়ে বলা যায়, বান্দরবান জেলার ৩৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে দু’একটি ইউনিয়ন বাদে সবগুলো ইউনিয়নে ভিজিট করার সুযোগ হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ইউ.পি সচিবদের সব সময় ইতিবাচক মনোভাব তৈরির চেষ্টা করেছি। এক কথায় বলব-বান্দরবান জেলার স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও জেলা পরিষদের কার্যক্রম কাগজে-কলমে ভালই চলছে। বাস্তব সুফল ও অগ্রগতি পেতে চাইলে তদারকির পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। বিশেষ করে দুর্গম ও কষ্টসাধ্য জায়গাগুলোতে ভিজিট বৃদ্ধি করা দরকার। পাজেরো গাড়ি চলবে যেখানে, ভিজিট হবে সেখানে- এ নীতি সকলকে পরিহার করতে হবে।
বান্দরবান জেলার পর্যটন নিয়ে কাজ করার তেমন সুযোগ হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মূলতঃ পর্যটন নিয়ে কাজ করে থাকেন। নীলাচলের কয়েকটি কটেজ ও একটি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি হচ্ছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সে হিসেবে ওই কমিটিতে কিছুদিন কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু খুব বেশি সফলতা বয়ে আনতে পেরেছি বলে মনে করিনা। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্বেও পর্যটকদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ ব্রুশিয়ার তৈরি, উইকিপিডিয়াতে পর্যটন সম্পর্কিত তথ্য প্রদান সবশেষে নীলাচল নামে একখানা প্রকাশনা বের করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম এবং বাস্তবায়ন করেছি। সবশেষে বলব, পর্যটনে বান্দরবান এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। একে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারায় হল বড় সফলতা।
সকল স্তরের জনগণের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের একটা প্রয়াস যোগদানের সময় থেকে শেষ অবধি ছিল। যদি ও আমলাতন্ত্র ও রাজনীতি এক হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমলাতন্ত্রের জনক ম্যাক্স ওয়েবার এ সম্পর্কে লিখেছেন; ‘The honor of the civil servant is vested in his ability to execute conscientiously the order of superior authorities, without his moral discipline and self-discipline and self-denial, in the highest sense, and otherwise the whole apparatus would fall to pieces’. রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সকল স্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাথে সু-সম্পর্ক ব্যতীত প্রশাসন পরিচালনা কঠিন। এ কঠিন কাজটি সম্পাদন করতে হয় অতি ভালবাসা ও অতি তিক্ততার মাঝামাঝি পর্যায়ে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে।
তারপরেও কখনো কখনো সম্পর্ক খারাপ হয়ে পড়ে। কখনো মনের অগোচরে, কখনোবা কান কথার ফিসফিসানির কারণে। যাচাই-বাছাই করার প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে খুব সীমিত দেখা যায়। বান্দরবানে একব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতি। ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির সুবিধার পাশাপাশি অনেকগুলো অসুবিধা রয়েছে। এ অসুবিধাগুলো কখনো কখনো চরম আকার ধারণ করলে বিপত্তি নিশ্চিত। বান্দরবানে প্রটোকল এক যন্ত্রণার নাম। এ যন্ত্রণার আপাততঃ নিরাময় নেই। অফিসারদের পদায়ন হলে অল্প দিনের মধ্যে মোহভঙ্গ ঘটে। অর্ধচন্দ্র ব্যতীত স্বেচ্ছায় বান্দরবানে কাজ করতে আগ্রহী কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল।
সবশেষে বলব, প্রাচীনকালে আমলাদের যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি ছিল রাজার প্রতি আনুগত্য। আধুনিক আমলাতন্ত্রে আমলাদের শক্তি হলো তাদের পেশাগত দক্ষতা। আর এই দক্ষতার কারণেই চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস আমলাতন্ত্রকে ধ্রুবতারার সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন, এ তারকা স্থির এবং সব তারকারাই এর নির্দেশে চলে।
কিন্তু আসলেই কী আমাদের সেই দক্ষতা আছে? আসলেই কী আমরা ধ্রুবতারা? আসলেই কী আমরা স্থির না অস্থির? এসব প্রশ্নের জবাব মনের অগোচরে রয়েই গেল।
লেখক: মুফিদুল আলম
বান্দরবানের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।