Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

হরেক রকম মিষ্টান্ন নিয়ে ‘ইষ্টান্ন’

'ইষ্টান্ন'র উদ্যোক্তা আফিয়া আবিদা ইষ্টি

বাবার চাকরির সূত্রে দেশ ঘুরে ঘুরে নয়টি স্কুলে পড়েছেন তিনি। অনেক অনেক বন্ধু কিংবা জায়গার প্রভাবেও মিষ্টিটা ঠিক জমতোনা তার পরিবারে। কিন্তু এই মানুষটির হাতেই যে জমবে এত এত সুস্বাদু মিষ্টির বাহার, তা কি ঘুণাক্ষরেও কেউ ভেবেছিল? এমনকি ভাবেননি মানুষটি নিজেও। আফিয়া আবিদা ইষ্টির হাতে তাইতো হরেক মিষ্টির সৃষ্টি অনেকটা জাদুর মতই। 

কর্পোরেট জগতে কাজের সূত্রে বিভিন্ন ইভেন্টে আফিয়ার অফিসে ক’দিন পর পরই দোকান থেকে মিষ্টি আনা হতো। সেই মিষ্টি বেশিরভাগ হতো নষ্ট। কেননা অফিসের অনেকে মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না, আবার অনেকের কাছে দোকানের মিষ্টি একটু বেশিই মিষ্টি লাগে।

“একদিন অফিসে পটলাক পার্টি হলো। আমি বানিয়ে নিয়ে গেলাম মিষ্টি, তবে তা অবশ্যই কম চিনি দিয়ে। আমার কলিগরা মিষ্টি খেয়ে অনেক প্রশংসা করলেন এবং একজন তো রীতিমত ব্যবসা খোলার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। আমার বা আমার কলিগদের মত যারা মিষ্টি খেতে চাইলেও বেশি বেশি মিষ্টি স্বাদের জন্য তা খেতে পারেননা, সেই ভাবনা থেকেই মূলত: তাদের জন্য কম মিষ্টির মিষ্টি নিয়ে কিছু করার তাগিদ অনুভব করলাম।”- জানান আফিয়া।

কিন্তু আগেও ব্যবসার অভিজ্ঞতা থাকা আফিয়া খুব ভাল করেই অনলাইন বাজারের গতিপ্রকৃতি এবং অনলাইনে খাবারের ব্যবসা করার বাড়তি ঝক্কি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। আর তাইতো প্রফেশনাল কোর্স করে এবং ইউটিউব দেখে বেশ আটঘাট বেঁধেই সম্পূর্ণ একক শ্রমে ও প্রচেষ্টায় শুরু করলেন তার উদ্যোগ ‘ইষ্টান্ন’র যাত্রা। 

উদ্যোগের নামকরণের ক্ষেত্রে নিজের নামের সাথে ছন্দ মিলিয়েই নামটি রাখা। “ইষ্টির হাতে বানানো মিষ্টির উদ্যোগ, তাই এই সব মিষ্টান্নের নাম হোক ইষ্টান্ন!”- হাসতে হাসতে আফিয়া আবিদা ইষ্টির জবাব। 

খাঁটি সব উপকরণ দিয়ে তৈরি রসালো লালমোহন পাওয়া যাবে ইষ্টান্নে

নিজের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতা এ দুই ব্যাপারেই আফিয়ার আছে সজাগ দৃষ্টি। আর তাই তার তৈরিকৃত মিষ্টির আইটেম হাতেগোণা। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য হলো, “যেহেতু আমি এখন পর্যন্ত আমার মূল পেশার পাশাপাশি উদ্যোগের কাজ চালাচ্ছি, তাই যেকোন অর্ডারের কাজ আমাকে অফিসের পর করতে হয়। এছাড়া আমার মিষ্টির ঘি আসে সাতক্ষীরা থেকে, প্রয়োজনীয় বেসন সরাসরি ডাল থেকে ভাঙিয়ে বানাই, দুধ সংগ্রহ করি খামার থেকে, এমনকি চিনির ক্ষেত্রেও সংগ্রহ করি লাল চিনিটা। এসব কিছু আমাকে একাই করতে হয়। এইসব সামলে প্রতিটি অর্ডারের ডেলিভারি পর্যন্ত আমি সবসময় চেষ্টা করি টাটকা পণ্যটি গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে। এজন্য আমি সবরকম মিষ্টি বানানোর সুযোগ পাইনা। কিন্তু এইটুকু স্যাটিসফেকশন থাকে যে আমি যতটুকুই বানাচ্ছি তা খাঁটি জিনিস দিয়ে বানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনরকম আপোষ করতে আমি রাজি নই।”

চাকরীর বয়স প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলেও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে বসলে ব্যবসার বাইরে আফিয়া নিজেকে দেখতে পাননা। ব্যবসা করা নিয়ে আছে তার একটা মূলমন্ত্র। আর সেটা তার ভাষ্যমতে, “কথায় আছেনা, নিজের বুদ্ধিতে গরীব হওয়াও ভালো! আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে গেলে সেটাই মনে রাখি। ব্যবসায় যে চিন্তার স্বাধীনতা আছে, তা চাকরিতে নেই। নিজের মেধাটুকু নিজের প্যাশনের জায়গায় খাটালে ফলাফল ভাল বৈ মন্দ হবেনা।”

‘ইষ্টান্ন’তে পাওয়া যাবে একদম টাটকা নরম গরম বালুসাই

“আমার মিষ্টির ওজন প্রায় সবসময়ই এদিক সেদিক হয়”। ইষ্টির এমন কথায় ভড়কে যেতেই তিনি সহাস্যে যোগ করলেন, “গ্রামে হিসাব করতে গেলে সবসময়ই ওজন একদম সঠিক হয়না। সেক্ষেত্রে আমার বাবার একটা কথা সবসময় মেনে চলি। বাবা বলেন, কাউকে দিতে হলে বেশিটাই দিও, কখনো কম দিওনা। তাই কেউ ৮০০ গ্রাম মিষ্টি অর্ডার করলে যদি কারও কাছে ৮৫০ গ্রাম মিষ্টি পৌঁছে যায় তো আমাকে আবার কিছু বলবেননা প্লিজ!” 

“বাংলাভাষী নারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘মেয়ে’ নেটওয়ার্কের ব্যবসায়িক গ্রুপ হুটহাটের মাধ্যমেই আমার ব্যবসা শুরু আর হুটহাটের ক্রেতাদের দিয়েই মূলত: আমার ব্যবসার চাকা সচল রয়েছে। এর বাইরেও যারা আমার উদ্যোগের কথা জেনে, আমাকে বিশ্বাস করে আমার কাছ থেকে মিষ্টি নিয়েছেন, তাদের সবার সাথেই আমার এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা বেশ ভালো।”- জানালেন আফিয়া।

করোনা অতিমারীর অভিজ্ঞতা সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর তাই তো নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে শতভাগ উপস্থিত থেকে ‘ইষ্টান্ন’র সুনাম দিকে দিকে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস নিয়েই আফিয়া আবিদা ইষ্টির পথচলা।

ফেইসবুক পেইজের লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/eshtanno

শেয়ার করুন
Exit mobile version