ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক অনুষ্ঠান, যেখানে পৌরহিত্য করছেন খোদ পোপ ফ্রান্সিস।
এ সমাবেশে বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করবেন পোপ। বক্তৃতা দেবেন যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে।
বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমারেও একই ধরনের মুক্ত প্রার্থনাসভায় পৌরহিত্য করেন পোপ। সেখানে তিনি সবাইকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানান।
পোপের আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। এ অনুষ্ঠান সাড়ে ৯টায় শুরু হলেও আরও আগে থেকেই খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরাও প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে আসেন।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পোপ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পরপরই শুরু হয় উপাসনা অনুষ্ঠান। ঈশ্বর বন্দনায় ‘এসো তার মন্দিরে করি স্তবগান… একসাথে দলে দলে হয়ে এক প্রাণ..,’ প্রার্থনা সংগীতে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান।
উপাসনা সংগীতের মধ্যেই সকাল ১০টায় মঞ্চে ওঠেন পোপ ফ্রান্সিস। বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় আচারে চলতে থাকে অনুষ্ঠান।
ষোল জন ‘ঈশ্বরসেবককে’ যাজক হিসেবে অভিষিক্ত করার আগে উপসনায় আগতদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পোপ। তার স্প্যানিশ ভাষার বক্তব্য বাংলায় তর্জমা করে শোনানো হয়।
পোপ বলেন, “প্রিয়জনেরা, আজকের এই শুভ দিনে, যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই এসেছেন, আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, আপনারা অনেকে অনেক দূর থেকে এসেছেন, অনেকে দুই দিনের যাত্রাপথ অতিক্রম করে এখানে এসেছেন, আপনাদের এ উদারতার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
“এটা প্রকাশ করে মঙ্গলের জন্য আপনাদের সকলের অন্তুরে অনেক ভালবাসা রয়েছে। এটা প্রকাশ করে যিশু খ্রিস্টের জন্য আপনাদের অনেক অনেক ভালবাসা রয়েছে।”
খ্রিস্টীয় চার্চের এই প্রধান পুরোহিত বাংলাদেশে যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, “এভাবে সামনের পথে এগিয়ে যান, পর্বতের উপর যিশুর অস্টকল্যাণ বাণীর আলোকে, সেই প্রেরণা নিয়ে। আজকে সকলের কাছে আমার বিশেষ আহ্বান, এই নব অভিষিক্ত যাজকদের জন্য প্রার্থনা করতে।”
তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার বিকালে মিয়ানমার ঢাকা পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোপ। পরে ধানমণ্ডিতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বঙ্গভবনে যান পোপ, সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের পর দুপুরে ঢাকায় ভ্যাটিকান দূতাবাসে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
বিকালে তিনি যাবেন কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে, সেখানে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। শান্তি কামনায় আন্তঃধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত ঐক্য বিষয়ক সভায় অংশ নেবেন।
সফরের শেষ দিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার টেরিজা হাউজ পরিদর্শনে যাবেন পোপ। এরপর তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন।
সফরের ইতি টেনে বিকাল ৫টায় শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়বেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু। তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান।
পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।