হাঙ্গেরির দানিউব নদীতে পানি প্রায় নেই বললেই চলে। আর সেই শুকিয়ে যাওয়া নদী থেকেই মিলেছে রাশি রাশি সোনা, রুপার মুদ্রা। মুদ্রাগুলো সবই কিন্তু প্রাচীন আমলের। প্রায় শুকনো খটখটে নদীটি থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা পেয়েছেন দু’হাজারের উপর মুদ্রা।
ফেরেঞ্জি মিউজিয়ামের সঙ্গে যুক্ত প্রত্নতত্ত্ববিদ কাতালিন কোভাস জানিয়েছেন, মুদ্রা ছাড়াও মিলেছে প্রাচীন আমলের লোহার অস্ত্র, কামানের গোলা, বর্শা, তরবারি।
ইউরোপের অন্য নদীগুলোর মতো দানিউবেরও বেশ কিছু জায়গা একেবারে শুকিয়ে গেছে। মাত্র ১৫ ইঞ্চি পানিস্তর এই নদীতে। বুদাপেস্টের দক্ষিণে এর্দ শহরের গা বেয়ে নদীটা যেখানে বইছে, সেখানেই মিলেছে এগুলো। নদীতে পানিস্তর বেড়ে যাওয়ার আগেই কাজ সেরে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন ইতিহাসবিদরা।
প্রাচীন আমলের এত মুদ্রা এক সঙ্গে পেয়ে উচ্ছ্বসিত গবেষকরাও। প্রত্নতত্ত্ববিদ বালজ ন্যাগি জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশই মুদ্রাই প্রায় ১৬৩০-১৭৪৩ সালের। নেদারল্যান্ডসে তৈরি হয়েছিল মুদ্রাগুলো। এছাড়াও ফ্রান্স, জুরিখ ও ভ্যাটিকানের মুদ্রাও রয়েছে।
দানিউবের পাশেই বুদাপেস্টের প্রাচীন সেতুর ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল নাৎসিদের হামলায়। তার পাশেই মিলেছে এই গুপ্তধনের সন্ধান।
২২ কারাটের হাঙ্গেরিয়ান মুদ্রা ছাড়াও ফ্রান্সের মুদ্রাগুলো যে ১৬০০ শতকে ষোড়শ লুইয়ের আমলের তাও নিশ্চিত করছেন গবেষকরা। ১৭০০ থেকে ১৮০০ শতকের ইউরোপের অন্য দেশের মুদ্রাও মিলেছে।
ফেরেঞ্জি মিউজিয়ামের অধিকর্তা গাবর গুলিয়াস একটি সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম বলেন এই প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধারের কথা। প্রথমে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমেই গুপ্তধনের হদিশ পেয়েছিলেন। তিনি প্রথম সেন্ট জর্জের ছবি দেওয়া একটি ঘণ্টা খুঁজে পান।
তিনিই মিউজিয়ামকে জানান। তারপর শুরু হয় কাজ। ১৭৪৩ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার আমলের মুদ্রাও উদ্ধার হয়। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের অনুমান, এখানে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মিলতে পারে।
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধারের কাজ অব্যাহত। তাই আপাতত ২০২০ সালে একটি প্রদর্শনীতে এই উদ্ধার করা গুপ্তধনগুলো রাখার কথা ভাবা হয়েছে। হাঙ্গারির অন্য অংশেও প্রদর্শনীটি করার কথা ভেবেছেন তাঁরা।
দানিউব নদীটি জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেন এই ১০টি দেশের মধ্য দিয়ে বহমান। সম্প্রতি স্বর্ণমুদ্রাগুলো যেখানে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে নদীটি প্রায়ই শুকিয়ে গেছে। জায়গাটি বুদাপেস্ট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।