অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে নুসরাত সুলতানার কবিতার বই ‘গহিন গাঙের ঢেউ’। বইটি প্রকাশ করেছে রচয়িতা প্রকাশনী। পাওয়া যাচ্ছে ৬৩২ নম্বর স্টলে।
বইয়ে নুসরাত সুলতানার লেখা ১০১টি কবিতা রয়েছে। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন লুৎফুল হোসেন। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকায়।
‘গহিন গাঙের ঢেউ’য়ে প্রকাশিত দু’টি কবিতা:
উপহার
একটা উপহার চাই
খুউব আকর্ষণীয়, অমূল্য উপহার।
না তাতের শাড়ি, লাল চুড়ি, নীল টিপ কোনটাই না।
গোধূলির নৈশব্দ মাখা কিছুক্ষণ না।
কোজাগরী জোছনা ও না!
একটা নাম চাই।
যে নাম থাকবে তোমার মুখে
আর আমার কানে।
যখন খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা করবে;
তখনই কেবল ঐ নামে ডাকবে
উপেক্ষা কিংবা অপ্রেমে
কিংবা স্নেহে ডাকতে পারো
বাবা মার দেয়া নামে।
বলতে পারো কবিও
আমি কিচ্ছুটি ভাববো না।
তোমার দেয়া নামে ডাকবে কেবল ভালোবাসায়।
ডাক শুনেই আমি বুঝবো
আমাকে কেউ ভালোবাসছে!
আর আমি মুহুর্তে ফানুস হয়ে যাবো।
বন্যার মিতা,আর অমিতের বন্যা নাম;
রবিবাবুর সুবাদে জেনে গেছে সবাই।
তোমার এই উপহার
আমি জানতে দেবো না কাউকে!
মহাকাল কে বলে দেবো
সে যেন তার ডায়েরি তে লিখে না রাখে।
ইথার কে বলে দেব
তুমি ভাসিয়ে রেখো না এ ডাক তোমার ঢেউয়ে।
এ ডাকে কেবলই আমার আত্মার অধিকার।
যা শ্রবন ইন্দ্রিয় হয়ে পৌছুবে হেথায়।দেবে আমাকে একটা নাম!
যুগপৎ
তুমি নেই নুয়ে পড়েছে ক্যাকটাস, মানিপ্লান্ট।
ঝুল পড়েছে বারান্দায়,রান্নাঘরে, নোংরা হয়ে গ্যাছে তৈজসপত্রগুলো।
আর প্রতিনিয়ত আমি খেয়ে যাচ্ছি কাচ্চি,তেহারী।
তুমি অবশ্য ডীপ ফ্রিজে রেখে গেছ রান্না করা চিতল মাছ,কাঁচকি মাছ।
রেখে গেছ আমার খুব প্রিয় মশুর ডাল দিয়ে পালঙ শাক।
কে খায় গরম করে??
হোক না আমার পেটে সমস্যা!
বিয়ের ছবিটা আর জ্বলজ্বল করেনা!
কেন এই শাস্তি??
আমার পৃথিবীতে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করাতে চাও?
অক্সিজেনের অস্তিত্ব কি কেউ আলাদাভাবে অনুভব করে?
কে বলে বিরহে ভালবাসা গভীর হয়?
হ্যাঁ হতে পারে সেটা প্রেম।
ভালবাসা যে ক্ষুদার অন্নের মত,
শ্বাস প্রশ্বাসের অক্সিজেনের মত,
প্রচন্ড শীতের গরম কাপড়ের মত।
যা না থাকাটা, থাকার চেয়ে বেশী প্রকট।
তাই বলে তুমি আমাকে তোমার অস্তিত্বের গুরুত্ব বোঝাবে!
হ্যাঁ হতে পারে শরতের ধবল মেঘে আমি তোমাকে খুঁজিনা!
দিগন্ত আমাকে উদাস করে,
কিন্তু ঘরের সাথে আকাশের কিসের বিরোধ বল?
কিম্বা ঘুমের সাথে স্বপ্নের কেন বিরোধ হতে যাবে?
ঘর-সংসার,জীবন, অভ্যাস, ভালবাসা, আর তুমি যে একই সূতোয় গাঁথা।
তুমি কি সেটা বোঝনা!
লেখক পরিচিতিঃ জন্ম ১৯৭৮ সালের ১লা মার্চ, বরিশালে। মা শিক্ষিকা খালেদা বেগম ও বাবা মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক আবুয়াল ইসলাম। কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে শহরতলীর গ্রাম চরবাড়িয়ার আলো, বাতাস, সবুজ ধানক্ষেত সবকিছুর সাথে দারুণ সখ্যে বেড়ে উঠেছেন।
চাকরিজীবি মা আর ছয় ভাইবোনের সংসার দায়িত্ব নিতে শিখিয়েছে সেই শৈশব থেকেই। গ্রামের স্কুলে প্রথম হওয়া মেয়েটি অচিরেই হয়ে ওঠে সবার ভালোবাসার পাত্রী। বড় ভাই তারিকুল ইসলামের কাছে পায় বই পড়ার দীক্ষা। অষ্টম-নবম শ্রেণীতে বসেই পরিচয় হয় বিশ্বকবি, নজরুল, জীবনানন্দ, আল মাহমুদ, পাবলো নেরুদা প্রমুখের সাথে।
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর পাট চুকিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে মেয়েটি বাড়ি আর কলেজ ছাড়া কিছুই চিনতো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের ন্যায্য আন্দোলনে সেই মেয়েটিই মিছিলের অগ্রভাগে।
তথ্যবিজ্ঞান পড়ার সুদীর্ঘ আট বছর রোকেয়া হলে কেটেছে কন্সার্ট, আড্ডা আর লেখাপড়া সব মিলে। সহপাঠীরা যখন তথ্যবিজ্ঞান পড়াশোনায় ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করে, মেয়েটির তখন দিন যায়, জাঁ পল সার্ত্রে, কাল মার্কস, ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব আর ভারতীয় দর্শণ পড়ে।
এম. এ. পাশ করার সাথে সাথেই সমাজ আর পরিবারের দাবি- বিয়ে করতে হবে। মেয়েটি তার সর্বনাশ দেখতে পায় সহপাঠী আজিজুল ইসলাম এর চোখে। আজও তিনিই জীবনের অংশীদারিত্বে বিরাজমান। শ্বাসপ্রশ্বাস এর অক্সিজেন হয়ে আছে পুত্র আইয়াদ আয়মান।
রুটি-রুজির প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন এম. আই. এস. টি’র স্টাফ অফিসার। জীবনের এই সুদীর্ঘ পরিক্রমায় মহাকালের খেয়ালি ইচ্ছায় আর পাঠকদের ভালোবাসায় এক কবি ও লেখকের জন্ম। একুশ শতকের আলোকিত সভ্যতার মাঝে যেমন কৃষ্ণগহ্বর তেমনি লেখক ও কবির এই সুন্দর, সাবলীল জীবন প্রদীপের তলায় আছে কি কোন অপ্রাপ্তির অন্ধকার ছিঁটেফোঁটা? জানে কবির বোধ, বেদনা আর ক্ষরণ।
আর সেখানেই লেখক আলো ফেলতে চান উপলব্ধির আলোয় শব্দমালা গেঁথে। তুলে দিতে চান পাঠকের হাতে। আবার পাঠকের বেদনা, স্বপ্ন, হতাশা, আঁকেন গল্প কবিতার ক্যানভাসে। এটাই কবির আরাধনা, এই আরাধনা তিনি করেন পরম মমতায়, ভালোবেসে।
ভাবনার মুক্তির জন্য নুসরাত বারবার ছুটে গেছেন কবিগুরু, নজরুল, রুদ্র, কাহলিল জিব্রান, নেরুদা, ক্রিষ্টিয়ান কার্লসেন ও হালের লুৎফুল হোসেন এর কাছে। সবার এই ঋণ ভালোবেসে বয়ে বেড়াতে চান আজন্ম।
বাস্তবের ধুলি গায়ে মেখে কবি হাঁটেন নক্ষত্রের পথে। সেই পথে সহযাত্রী সবার ভালোবাসা আদ্রিত ‘তাহাদের শব্দ প্রপাত ২০১৮’ (যৌথ কাব্য গ্রন্থ), ‘ছায়া সহিস ২০১৯’ (একক কাব্য গ্রন্থ), ‘নৈশব্দের কাব্য২০১৯’ (যৌথ কাব্য গ্রন্থ), ‘গহীন গাঙের ঢেউ ২০২০’ (একক কাব্য গ্রন্থ)।