মানুষ যখন থেকে কুকুর পুষতে শুরু করেছিল, তার পরেও কয়েক হাজার বছর বিড়াল মানুষের স্নেহদৃষ্টি পায় নি। প্রাগৈতিহাসিক ছবিতে কিংবা গুহাচিত্রে গৃহপালিত বিড়ালকে আমরা দেখতে পাই না। মিশরীয় ছবিতে প্রথম যে বিড়াল দেখা যায়, তাও খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২০০০ অব্দের আগে নয়। প্রায় চার হাজার বছর আগে মিশরীয়রা আফ্রিকার একটি বুনো বিড়ালকে পোষ মানিয়েছিল। বিড়ালের মাথাওয়ালা দেবী হলেন বাস্ট। আবার তখন বিড়ালকে দেবদেবীর মত ভক্তি করা হত। এইসব বিড়াল খামার থেকে ইঁদুরদের খেয়ে ফেলে শস্য রক্ষা করত।
বিড়াল এমনই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, মিশরে দুর্ভিক্ষ ও রোগ ব্যাধির বিরুদ্ধে বিড়ালকে বেশ গণ্যমান্য করা হত। বিড়াল মারলে, এমনকি আকস্মিকভাবেও কেউ যদি হঠাৎ বিড়ালের প্রাণহানির কারণ হত, তাহলে তার শাস্তি ছিল মৃত্যু।
মিশরীয় বিড়াল বাইরে চালান করাও অবৈধ বলে গণ্য হত। তা সত্ত্বেও, খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ অব্দে ইউরোপের সমস্ত অংশে চোরাচালানের মাধ্যমে বিড়াল ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে স্থানীয় বনবেড়ালের সংস্পর্শে এসে দু’ধরনের বেড়ালের সৃষ্টি হয়। একটা হল ছোট লোমওয়ালা বিড়াল, যাদের দেখা যেত ইংল্যান্ডে; আর অন্য জাতের বেড়ালটির নাক চ্যাপ্টা। চতুর্দশ শতকে বিড়াল খুব খাতির পেয়েছিল। সেইসময় সারা ইউরোপে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, মধ্যযুগে ডাইনিদের হত্যার সময় বিড়ালদের নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হত। ভাসমান জাহাজের ক্যাপ্টেনরা বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করত। ‘মে ফ্লাওয়ার’ জাহাজে তো কর্মীদের সঙ্গী হয়েছিল একটি বিড়াল। মার্কিন উপনিবেশিকদের কাছে আমদানি করা বিড়াল ছিল খুবই মূল্যবান। তারা বিড়াল পুষত, আবার ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ করার জন্যও তারা বিড়ালকে কাজে লাগাত।
এখনও অনেক বিড়াল মূলত ইঁদুর ধ্বংসকারী হিসেবেই বেঁচে আছে। তবে আধুনিক বিড়ালের প্রাথমিক ভূমিকা হল মানুষের ভালো সঙ্গী হিসেবে থাকা। নানা জাতের বিড়াল থাকলেও তাদের গঠন প্রায় এক। তবে গায়ের লোম ও চোখের রং আলাদা। পুরুষ বিড়ালের ওজন ৯ পাউন্ড থেকে ১৪ পাউন্ড, লম্বায় তারা গড়ে ২৮ ইঞ্চি। স্ত্রী বিড়ালের ওজন ৬ পাউন্ড থেকে ১০ পাউন্ড। তারা লম্বায় গড়ে ২০ ইঞ্চি। বিড়ালের গড় আয়ু ১৪ থেকে ১৭ বছর। তবে ইংল্যান্ডের একটি পোষা বিড়াল ৩৪ বছর বেঁচে ছিল। বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি খুবই প্রখর। বিশেষ করে রাত্রে। এটাই তার বড় শক্তি। তা ছাড়া বিড়ালের শ্রবণশক্তিও খুব ভালো।