Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

বান্দরবানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাধ্যমিকের পাঠদান ভালো চলছে না

রফিকুল ইসলাম, লামা, বান্দরবান ।। বান্দরবান জেলায় ৪৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ এবং আসবাবপত্র সংকট নিয়েই ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষা কার্যাক্রম চলছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে শিক্ষা কার্যক্রম চলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও শিক্ষকদের মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় পাঠদানের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার এই দুরাবস্থা নিয়ে পড়েছেন চরম হতাশায় ।
বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার সুমা বড়ুয়া জানান, কোন ধরণের উপযুক্ততা ও উপযুক্ত শিক্ষক ছাড়াই গণহারে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, রোয়াংছড়ি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এমন অনেক শিক্ষার্থীরই ইংরেজি পাঠ্যবই সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তারা বইগুলো দেখে দেখে পড়তে পর্যন্ত পারছে না। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই একই অবস্থা।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩শত ৪৩ টি।  প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণীতে উন্নীত করার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনক্রমে জেলায় গত ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়।

গত ২ বছর ধরে সদর উপজেলার দুংরু পাড়া, রুমা বাজার আর্দশ, রোয়াংছড়ি চাইংগ্যা, লামার মেরাখোলা, তমভ্রু মংচিং পাড়া বিদ্যালয়-এর ছাত্রছাত্রীরা জে.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে। এই বছর রোয়াংছড়ি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় এর ছাত্রছাত্রীরা জে.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে।

২০১৭ সালের শিক্ষাবর্ষে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমোদনক্রমে জেলায় আরো ৩৯ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। জেলায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ১১ শত ৪৭, ৭ম শ্রেণীতে ৩৬৮ ও ৮ম শ্রেণীতে ২৭১ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে।

মেরাখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার দাশ বলেছেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পদ সৃষ্টি না করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুুর রহিমও বলেছেন একই কথা।

লামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার রাশেদুল হাসান মো: মহিউদ্দিন জানান, যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে তাদের সর্ম্পকে কোন তথ্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নেই। ফলে দক্ষতাভিত্তিক, বিষয়ভিত্তিক, একীভূত শিক্ষা, কারিকুলাম, ধারাবাহিক মূল্যায়নের উপরসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কোনো কাজেই আসবে না।

শিক্ষানুরাগী মোঃ আলমগীর জানান, পার্বত্য জেলায় শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে করা হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার কারণে শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বি.এড এবং বিষয় ভিত্তিক যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাধ্যমিকের পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়ুয়া জানান, প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি সরকার বিষয়ট আমলে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।

শেয়ার করুন
Exit mobile version