Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

বান্দরবানে খেয়াংদের নবান্ন উৎসব

ভালো ফলন পাবার আশায় জুম ক্ষেতে ‘বুগেলেমা’ পূজা করছেন এক খেয়াং কৃষক।

জুমের ধান কাটা শেষে ঘরে ফসল তোলার পর পাহাড়ে চলছে নবান্ন উৎসব। এ উপলক্ষে ২ নভেম্বর শনিবার সকালে বান্দরবান সদরে গুংগুরু খেয়াং পাড়ায় নবান্ন উৎসব ‘ব্যুটাহ্ প্যই’ পালন করেছে খেয়াং সম্প্রদায়।

বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের আয়োজনে উৎসবে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী লোকগান, নাচ, পিঠা উৎসব ও জুমের ফসল প্রদর্শণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। তিনি বলেন, পাহাড়ে এ অঞ্চলে মানুষের শান্তি, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক, কৃষ্টি উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে শান্তিচুক্তির পর এ কাজগুলোর আরও গতি বেড়েছে।

মন্ত্রী বীর বাহাদুর আরও বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন বর্ণের সংস্কৃতি তুলে ধরার আয়োজন করে থাকে।

সম্প্রদায়ভেদে জুমধান কাটার আগে ও পরে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এর মধ্যে খেয়াংদের নবান্ন উৎসবের কারনে অনুষ্ঠানটি একটি মহামিলনের উৎসবের পরিণত হয়েছে।

সরকার সব জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগের কথা জানিয়ে মন্ত্রী জানান, নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষিত হয়ে সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে পাহাড় ও সমতলে এমন গোত্র ও বর্ণের পাঁচটি ভাষায় বই ছাপা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যার যার মাতৃভাষায় আরও বই ছাপা হবে।

উৎসবকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে পাড়ার মাঠে জড়ো হয় খেয়াং সম্প্রদায়ের শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ। পরের বছর ভাল ফলন পাওয়ার জন্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জুমক্ষেতে চলে ‘বুগেলেমা’ পূজা। যেখানে পাড়ার প্রবীণ এক ব্যক্তিকে দিয়ে মুরগি বিসর্জন দেওয়া হয়।

এরপর নিজেদের প্রথা অনুযায়ী পড়া হয় বিভিন্ন মন্ত্র।

উৎসবে অংশ নিতে আসা অতিথিদেরকে জুম ফসল, ধান কাটার সরঞ্জাম ও জুমচাষ সম্পর্কে বর্ণনা দেন জুমের মালিক চিংসাউ খেয়াং। তিনি জানান, ১০ কেজির ধান লাগানো জুমে ভাল ফলন হয়েছে। তবে ধানের চাইতে এ বছর মিষ্টি কুমড়া, ভূট্টা, মারফা, ধান্যা মরিচ বেশি ফলন পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সিটিটিউটের পরিচালক মংনুচিং মারমা। সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের আহবায়ক সিংইয়ং ¤্রাের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসাইন, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক বদিউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল-নুর হক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

শিক্ষক মংহ্লাপ্রু খেয়াং জানান, খেয়াং জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০০১ সালে আদমশুমারীতে ৫৪৪৫ জন হলেও বর্তমানে দশ হাজারের উপরে। বান্দরবানে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি ছাড়া রাঙ্গামাটির কাপ্তাই ও রাজস্থলীতের খেয়াংদের বসবাস রয়েছে। তবে বান্দরবানে সদর উপজেলার গুংগুরু পাড়ায় এদের সংখ্যা বেশি।

শেয়ার করুন
Exit mobile version