নিজেদের এলাকায় পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে চিম্বুক পাহাড় থেকে বান্দরবান শহর পর্যন্ত লংমার্চ করেছেন ম্রো জনগোষ্ঠীর সহস্রাধিক মানুষ। রোববার সকালে তাঁরা চিম্বুক পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বান্দরবান শহরে জড়ো হন।
এ সময় তাঁরা হোটেল নির্মাণ বন্ধ করা, ভূমি সুরক্ষিত রাখা, নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নিরাপদে রাখাসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
চিম্বুক-থানচি সড়কের রামরি পাড়া থেকে ‘চিম্বুকবাসী’ ব্যানারে লং মার্চটি শুরু হয়। পুরোটা পথ পায়ে হেঁটে দুপুর ২টার দিকে তারা জেলা শহরের রাজার মাঠে জড়ো হন। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
লং মার্চে অংশ নেওয়া ক্রাতপুং ম্রো জানান, ‘পদযাত্রায় চিম্বুক পাহাড়ের নয় মাইল ও শৈল প্রপাত পর্যটন এলাকায় পুলিশ দুই দফা বাধা দেয়। পরে অবশ্য পদযাত্রা করতে দেয়া হয়’।
এ ব্যাপারে বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, ‘বাধা দেবার কথাটি সঠিক নয়। লংমার্চটি কোন কোন রাস্তা দিয়ে যাবে, নিরাপত্তার স্বার্থে সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আয়োজকরা পুলিশকে সঠিক কোনো তথ্য দিচ্ছিলেন না এবং বারবার রাস্তা পরিবর্তন করছিলেন। যে কারণে শহরের একেকটি মোড় অতিক্রম করার সময় তাদেরকে থামিয়ে পরবর্তী রুট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে’।
রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিংপাত ম্রো নামের স্থানীয় এক অধিবাসী লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে সিকদার গ্রুপের ‘আরএন্ডআর হোল্ডিংস’ ও সেনা কল্যাণ সংস্থা ‘ম্যারিয়ট হোটেল এন্ড রিসোর্ট’ নামে একটি পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে আনুমানিক ১ হাজার একর ভোগদখীল ও চাষের ভূমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ৬টি পাড়া সরাসরি ও ১১৬টি পাড়ার আনুমানিক ১০ হাজার বাসিন্দার ঐতিহ্যবাহী জীবিকা, চাষের জমি, ফলজ বাগান, শশ্মানঘাট ও পানির উৎস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।
সিংপাত ম্রো আরো বলেন, ‘গত বছর অক্টোবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কোন ধরনের সাড়া না পেয়ে নভেম্বর মাসে কালচারাল শোডাউনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
এরপর লিখিত বক্তব্যে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন সিংপাত ম্রো।
দাবিগুলো হলো চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প বাতিল করা। প্রতিবাদকারী পাড়াবাসী, জনপ্রতিনিধি, ছাত্রজনতাকে হয়রানি ও হুমকিপ্রদান বন্ধ করা। চিম্বুকের ম্রোদের ভোগদখলীয় ভূমিতে কোন ধরণের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে না ও যে উদ্দেশ্যে চিম্বুক পাহাড়ে ভূমি ব্যবহার করা হোক না কেন পাড়াবাসীদের সাথে আলোচনা করতে হবে।
সমাবেশে রেংচং ম্রো নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘যে সব মানুষের পায়ে স্যান্ডেল নাই, যে মানুষরা জানে না শিক্ষা কি জিনিস ও ঠিকমত বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত মৌলিক উপাদান দরকার। সে মৌলিক অধিকার থেকে শত বছর বঞ্চিত। তারা আজ ভূমি রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে।’
সমাবেশে ১০ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে যদি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় এবং চিম্বুকবাসীদের দাবি-দাওয়া পদদলিত করার চেষ্টা করা হয়। তাহলে পাড়াবাসী আর থেমে থাকবে না। তখন কোন শক্তি দিয়ে তাদের দমানো যাবে না।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের জেলা সভাপতি জুয়ামলিয়ান আমলাই।
লংমার্চ ও সমাবেশে চিম্বুক পাহাড়ের ৪৫টি পাড়ার প্রায় দেড় হাজার মানুষ অংশ নেন বলে আয়োজনকরা জানিয়েছেন।