কুমিল্লা আদালতের একটি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার সংলগ্ন জগমোহনপুর এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের মামলায় গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
কুমিল্লার কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি ওই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠায়। আজ সোববার গুলশান থানা-পুলিশ ওই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মো. কাইমুল হক।
২৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার আমলি আদালতে (চৌদ্দগ্রাম) ওই মামলার বিচারকার্যের দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাস কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় আসামাত্র দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলে সাতজন ও হাসপাতালে নেওয়ার দুদিন পর আরও একজনসহ মোট আটজন মারা যান ও ২৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হলে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা তদন্ত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. ইব্রাহিম।
দুই বছর এক মাস তিন দিন পর ২০১৭ সালের ৬ মার্চ কুমিল্লার আদালতে ওই দুই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সালাউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরী, চৌদ্দগ্রামের জামায়াতের সাবেক সাংসদ সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির সাহাবউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. মিজানুর রহমান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান, চিওড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির ও ক্যাডার মেজবাহ উদ্দিন ওরফে নয়ন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদাসহ ৭৮ জনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া মামলার ৫১ নম্বর আসামি।
কুমিল্লার কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। বিষয়টি এখন ঢাকার এখতিয়ারে। আমাদের এখানে কিছু নেই।’
অন্য দুই মামলা স্থগিত : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়। একটি মামলায় অর্থাৎ বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বলবৎ রয়েছে। ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কুমিল্লার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার হালদারপাড়া এলাকায় কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে এই মামলা করা হয়েছিল। ওই দিন রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা হয়। জেলা ও দায়রা জজ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১–এ এই মামলা বিচারাধীন। তবে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর এই মামলা হাইকোর্ট থেকে স্থগিত করা হয়। এ মামলাটি বর্তমানে স্থগিত।
এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় খালেদা জিয়াসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। এটিও স্থগিত।