নিজ নিজ জেলায় ধান কাটার কাজে ফিরতে চান বান্দরবানে আটকে পড়া শ্রমিকরা। বিভিন্ন সময়ে বান্দরবানে মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে আসা এসব মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পাহাড়ি জেলাটিতে। গণপরিবহন চালু না থাকায় তারা ধান কাটার মৌসুমেও বেকার দিন কাটাচ্ছেন সেখানে।
বান্দরবানের ভোটার না হওয়ায় অবরুদ্ধ অবস্থায় সরকারি ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছেন না তারা। হাতে সামান্য সঞ্চয়ের টাকা এবং পরিচিত জনদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অনিশ্চয়তায় কাটছে তাদের দিন।
বান্দরবান পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন আব্দু রাজ্জাক হাওলাদার। তার বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায়। তিনি জানান, ‘দেড় মাস আগে বান্দরবান এসেছিলাম। ১৫ দিনের মত কাজ করেছি। তারপর করোনার কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে আমার নিজের সামান্য ধানী জমি আছে। এখন যেতে না পারলে ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া নিজের জমির ধান কাটার পর আমরা অন্যের জমিতে কাজ করেও আয় করতে পারি।’
বান্দরবান শহরে এমন প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন বলে মনে করেন আব্দু রাজ্জাক হাওলাদার।
একই এলাকায় থাকেন আরেক শ্রমিক মনির হোসেন। তার বাড়িও পটুয়াখালীর দশমিনায়। তিনি বলেন, ‘আমি নির্মাণ কাজের শ্রমিক। আমার আধ কানি ইরি ধানের জমি আছে। কয়েকদিন আগে আমরা ১৭ জন একটা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে নিজের এলাকায় ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক জায়গা থেকে পুলিশ আমাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পরে রেইছা চেক পোস্ট থেকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়।’
বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা জানান, ‘কিছু মানুষকে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো। তবে তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় পরীক্ষা করা হয়নি।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর শামসুল হক সামু জানান, ‘আমার ওয়ার্ডে এমন ৩০-৪০ জন মানুষ থাকতে পারে। তারা একবার নিজের এলাকায় ফিরে যাবার চেষ্টা করেছিলো। তাদের কাছে প্রশাসনের কাগজও ছিলো। কিন্তু তারা নিজেরাই অর্ধেক গিয়ে ভয়ে আবার ফিরে এসেছে।’
বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, ‘প্রশাসন বা পুলিশের কাছ থেকে ‘কাগজ’ নিয়ে কেউ কোথাও যেতে চেয়েছে এমন কিছু আমি জানিনা। তবে এখনো কেউ যদি ধান কাটার জন্যে নিজ এলাকায় ফিরতে চায়, তাহলে প্রশাসনের সহায়তায় আমরা তাদের ফিরে যাবার ব্যবস্থা করবো। ১ জন ২ জন হলে হবেনা, ১০-১২ জন একসাথে হলে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে তাদের বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবো।’
জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম জানান, ‘যারা যেতে চায়, তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা যাবার ব্যবস্থা করে দেবো’।
প্রসঙ্গত, বান্দরবানে বরিশাল, রংপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহসহ আরো বেশ কিছু জেলা থেকে মৌসুমী শ্রমিকরা নির্মাণ কাজ, ইটভাটার শ্রমিক ও রিকসা চালকের কাজ করতে আসেন।


















