দ্রুত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ডিসেম্বরে আবার গণ-আন্দোলন হবে: জাতীয় কমিটি

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে পরিকল্পিতভাবে কয়লা লুটপাট করে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কয়লার সংকট দেখিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাততে পরিকল্পনা করেই এসব করেছে। সরকার এক যুগেও ফুলবাড়ী চুক্তির ছয় দফা বাস্তবায়ন করেনি। তাই আবারও ফুলবাড়ীসহ আশপাশের এলাকাবাসীকে সজাগ হতে হবে।

ফুলবাড়ী দিবসের এক যুগ পূর্তিতে আজ রোববার তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ ঘোষণা দেন। তাঁরা বলেন, দ্রুত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে ডিসেম্বরে আবারও গণ-আন্দোলন। কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সদস্যসচিব জয়প্রকাশ গুপ্তের সঞ্চালনায় শহরের নিমতলা মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান বক্তা তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশবিরোধী কয়লাখনির চুক্তি অনুযায়ী দেশের অংশ মাত্র ছয় ভাগ। বড় লুটপাট তো চুক্তির সময়ই হয়েছে। কিন্তু লুটেরাদের এই ছয় ভাগেও ভাগ-বাঁটোয়ারা না নিয়ে থাকতে পারেনি। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির লুটপাটের সঙ্গে শুধু বড়পুকুরিয়ার লোকজন নয়, উচ্চপর্যায়ের অনেক লোকজন জড়িত আছে। অনেক দিন ধরে এসব হচ্ছিল। কিন্তু সেটি বন্ধ না হয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০০৬ সালে ফুলবাড়ী আন্দোলন ও প্রতিরোধ না হলে আজ শুধু ফুলবাড়ী নয়, পুরো দিনাজপুর ধ্বংস হয়ে যেত। পরিবেশ বিনাশকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করেও পরিবেশ, জীবন ঠিক রেখে কীভাবে বিদ্যুৎ গ্যাসের চাহিদা মেটানো যায়, তার পরিকল্পনা জাতীয় কমিটি সরকারকে দিয়েছে। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে বিদ্যুৎ ঘাটতির দোহাই দিয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী রামপাল, ফুলবাড়ী, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ফুলবাড়ী আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য বিষয় ছিল দেশের সম্পদের ওপর দেশের জনগণের মালিকানা এবং কর্তৃত্ব। সেই সঙ্গে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। কিন্তু দায়মুক্তি আইনের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অস্বচ্ছ রাখা হয়েছে, জনগণের জবাবদিহির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছে। তাই এবারের ফুলবাড়ী দিবসের অন্যতম দাবি দায়মুক্তি আইন বাতিল এবং ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন। সেই সঙ্গে যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। সরকার যদি এটি না করে, গণ-আদালতে অপরাধীদের বিচার করা হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে চক্রান্ত আগেও ছিল, এখনো চলছে। ওয়াদা করার পরও এশিয়া এনার্জিকে বিতাড়িত করা হয়নি। বড়পুকুরিয়ায় কয়লা ঘাটতি দেখিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পাঁয়তারা করতে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে কয়লা লুটপাট আর বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে।

আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, এ অঞ্চলটি আদিবাসী অধ্যুষিত। আদিবাসীদের জীবনধারা আলাদা। তারা চাইলেও সব স্থানে বসবাস করতে পারে না। এখানে কয়লাখনি হলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ আদিবাসীকে দেশান্তরী হতে হতো।

সমাবেশের শুরুতে আন্দোলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১২ অক্টোবর গণ-আন্দোলন সফল করতে ফুলবাড়ীতে উত্তরবঙ্গের তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপরও যদি ছয় দফা দাবি মানা না হয়, ডিসেম্বরে হরতাল-অবরোধসহ আবারও গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন সাইফুল ইসলাম।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহিন রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

এ ছাড়া সম্মিলিত অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষে ফুলবাড়ীতে কোনো প্রকার কয়লাখনি না চাওয়াসহ ছয় দফা দাবি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। এরপর একে একে শাখা যমুনা নদীর ধারে ফুলবাড়ী আন্দোলন নিহত আমিন সালেকিন ও তরিকুলের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

শেয়ার করুন