Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

ডাক্তার-নার্স-ঔষধ কিছুই নেই, তবুও এটা হাসপাতাল!

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় সাইনবোর্ডটি পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে গেছে বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতালের। ২৮ জানুয়ারি সকালে তোলা ছবি।

ডাক্তার নেই, নেই নার্স। স্টাফ যে দুয়েকজন আছেন, তারাও নানা অব্যবস্থাপনায় সেবা দিতে অপারগ। শুধু ভবনটা নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক হাসপাতাল। বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল।

প্রধান ডাকঘর সংলগ্ন এলাকায় সুন্দর অবকাঠামোতে গড়া বিশেষায়িত এই বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডায়াবেটিসের মতো দূরারোগ্য জটিল ব্যাধিতে জেলার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে খরচ ও সময় দু’টোই বাড়ছে রোগীদের।

এলাকার কিছু মানবহিতৈষী ব্যক্তিদের নিয়ে ২০০৭ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, বান্দরবান জেলা শাখা। এই সমিতিই পরিচালনা করছে বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতাল। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য আলাদা কোন পরিচালনা কমিটিও নেই। হাসপাতালটির সরকারি অনুমোদনও নেই। এ যেন অনেক ‘নেই’ এর সমাহার।

শুরু থেকেই স্থানীয় মহিলা ক্লাবের একটি জরাজীর্ণ ঘরে চিকিৎসা সেবা দিতেন ডাক্তার জীবময় মুরুং, ডাক্তার জ্যোতির্ময় মুরুং ও ডাক্তার কৃষ্ণ কান্তি দাশ। ডাঃ কৃষ্ণ কান্তি দাশ কোন সম্মানী নিতেন না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত হয় তিনতলা বিশিষ্ট বর্তমান ডায়াবেটিক হাসপাতাল। মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং হাসপাতালের জন্য কিনে দিয়েছেন আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দামী আসবাবপত্র। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা দিয়েছেন বাজার ফান্ডের একখন্ড দামী জমি। বান্দরবান সেনা রিজিয়ন হাসপাতালের ফ্লোর টাইলস করে দিয়েছে।

সব মহলের বহু উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে এলাকাবাসী আশা করেছিল বান্দরবানে একটি মানসম্মত বিশেষায়িত হাসপাতাল সেবা দেবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। বান্দরবান ডায়াবেটিক সমিতির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি পৌর মেয়র মোঃ ইসলাম বেবী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তিনিও গুরুতর অসুস্থ। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইছহাক দু’বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করার পর সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই চলছে বান্দরবান ডায়াবেটিক সমিতি। সমিতির কোষাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মাঝেমধ্যে গিয়ে হাসপাতাল দেখাশোনা করেন।

একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়িান, একজন অফিস সহকারি, একজন নাইটগার্ড ও একজন আয়া দিয়েই চলছে এই ডায়াবেটিক হাসপাতাল। তদারকির কেউ না থাকায় এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবে এই স্টাফেরাও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।

দৈনিক গড়ে ৫/৬ জন রোগী শুধুমাত্র ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে আসেন। চিকিৎসা সেবা নিতে হয় অন্য জায়গা থেকে। একটু সাশ্রয়ী রেট বলে শুধু রক্ত পরীক্ষা করতে কিছু রোগী এখানে আসেন। এক সময় দৈনিক গড়ে ৬০/৭০ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসতেন। ডাক্তার ত্রিলোচন চাকমা সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর ২ বছর পর্যন্ত আর কোন ডাক্তার নিয়োগ হয়নি এই হাসপাতালে।

বান্দরবান ডায়াবেটিক সমিতি, বান্দরবান জেলা শাখার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৯ সালে। কমিটি পূণর্গঠনেরও কোন উদ্যোগ নেই। ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় সমিতির বার্ষিক অনুদান ও স্থানীয় একটি ব্যবসায়ী সমিতির মাসিক অনুদানে চার জন স্টাফের বেতন চলে। বর্তমানে বান্দরবান ডায়াবেটিক হাসপাতালটি লাইফ সাপোর্টে আছে। মৃতসঞ্জীবনী সুরা দিয়ে পূণরুজ্জীবিত করার জন্য কেউ আছেন কি? প্রশ্ন বান্দরবানবাসীর।

শেয়ার করুন
Exit mobile version