পায়ে বরফের প্যাক লাগিয়ে হোটেল লবিতে বেশ খোশমেজাজে ঘুরছিলেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। খুবই শান্ত ছেলেটাকে দুশানবেতে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেল উচ্ছল প্রাণের আনন্দে। একটু আগেই তাঁর একমাত্র গোলে মালদ্বীপের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, আনন্দিত হওয়ারই কথা। অভিনন্দন জানিয়েই জিজ্ঞাসা, ‘আজ রাতে ঘুম হবে তো?’ এক গাল হেসে এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন, ‘গোল মিস করেছি সে জন্য, না গোলের আনন্দে?’
প্রতিবেদককে উত্তর দেওয়ার ঝামেলায় আর ফেললেন না সুফিল। নিজেই জানিয়ে দিলেন, ‘আমার গোলে বাংলাদেশ জিতেছে, এর চেয়ে বেশি আনন্দ আর কী হতে পারে।’
গোলশূন্য ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। ৯০ মিনিটে প্লেসিংয়ে গোল করে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচের মীমাংসা করে দিয়েছেন। একটু গভীরভাবে দেখলে শুধু একটি গোলই নয়, এখানে পাওয়া যাচ্ছে ভালো স্ট্রাইকারের গুণেরও বর্ণনা। বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের বিপক্ষে ডি বক্সের মধ্যে ফলো থ্রুতে না থাকার বদনাম আছে। অথচ পুরোপুরি ফলো থ্রুতে গিয়েই গোলটি পেয়েছেন সুফিল। ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জাফরের শট মালদ্বীপ গোলরক্ষক ঠেকালে দূরের পোস্ট থেকে দৌড়ে গিয়ে গোল।
যুবদলের জার্সিতে এটাই সুফিলের প্রথম গোল নয়। থিম্পুতে ভারতের বিপক্ষে ৪-৩ গোলের প্রত্যাবর্তনের জয়ের কথা মনে আছে? সে ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বদলি নেমে সমতাসূচক অর্থাৎ তিন নম্বর গোলটি করেছিল শ্রীমঙ্গলের এই ছেলে। আর কাল তো বদলি নেমে একমাত্র গোল করে বাংলাদেশকে জেতালেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্বে। আগের ম্যাচে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেললেও চোট থাকায় কাল প্রথম একাদশে রাখা হয়নি তাঁকে।
তবে গোলের আগে খুবই দৃষ্টিকটুভাবে ৬৪ ও ৬৮ মিনিটে দুটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন সুফিল। প্রথমটিতে জাফর বাম প্রান্ত দিয়ে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ডি বক্সে প্রবেশ করে গোলমুখে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুফিলকে দেন, বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেখেশুনে মারার পরে পোস্ট ঘেঁষে বাইরে। দ্বিতীয়টিতে স্বাধীনের কাট ব্যাক থেকে মারা শট গেছে ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এমন মিস প্রসঙ্গে মজার একটি কারণ জানালেন সুফিল, ‘ যেভাবে আমার ও অন্য সবার একের পর এক বল সাইড পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যাচ্ছিল, আমার তো মনে হচ্ছিল ওরা গোল পোস্টে তাবিজ গেড়েছে (হাসি)।’
দুশানবের সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে বসে যাঁরা খেলাটি দেখেছেন, তাঁদের কাছে সুফিলের এ মজাই সত্যি মনে হতে পারে!