Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার ব্যাখ্যা দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

প্রতীকি ছবি

“করোনা ভাইরাস।” যা বর্তমান সময়ে বিশ্বে সবচাইতেে উদ্বিগ্নের বিষয়। যতই দিন গড়াচ্ছে বিশ্বব্যাপী জনমনে ততই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। মারা গিয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৫ লাখের মতো মানুষ।

এই ভাইরাস নিজে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ছড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্কও। কিন্তু তার চেয়েও বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ছে মনুষ্য সৃষ্ট কিছু ভ্রান্ত ধারণা। সামাজিক গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যায় অনেক ধরণের পরামর্শ যার আসলে বাস্তবিক কোনো ভিত্তি নেই। এমনই কিছু ভ্রান্ত ধারণার ব্যাখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।

১.গরম আবহাওয়াতেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস: এটা ঠিক যে অনেক সংক্রামক রোগ- বিশেষ করে ফ্লু, শীতের মাসগুলোতেই বেশি হয়। ডিসেম্বরে প্রথম যখন চীনের করোনাভাইরাস ছড়ায় তখন সেখানে বেশ ঠাণ্ডা ছিল। পরবর্তীতে যেসব দেশে এই ভাইরাস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে, সেগুলোর অনেকগুলোই শীতপ্রধান। ফলে, একটি সাধারণ ধারণা তৈরি হয়েছে যে গরম পড়লেই এই ভাইরাস মরে যাবে। কিছু কিছু গবেষণাতেও দেখা যায়, গরম আবহাওয়াতে নতুন এই করোনাভাইরাসের স্থায়িত্ব অপেক্ষাকৃত কম।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা এখনও সম্ভব নয় যে, গরম- স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এই ভাইরাস বাঁচে না। বরঞ্চ এখন পর্যন্ত যেসব প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে রয়েছে, তাতে যে কোনো জায়গায়, যে কোনো আবহাওয়াতেই কোভিড-১৯ ভাইরাস বিস্তারের ক্ষমতা রাখে।

সুতরাং, WHO- এর মতে, গরম পড়লেও আপনার উচিৎ হবে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা। মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, বারবার হাত ধোন এবং চোখ, মুখ বা কান স্পর্শ করবেন না।

২.বরফে ঢাকা পড়ে যাবে ভাইরাস: শীতের দেশের বহু মানুষ মনে করছেন, ভারী বরফ পড়লে হয়তো করোনাভাইরাস টিকবে না। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বাইরের তাপমাত্রা যত বেশিই থাকুক না কেন আপনার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুতরাং বিভ্রান্তিতে না ভুগে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

৩.গরম পানিতে গোসল কি বাঁচার উপায়: শুধু গরম পানিতে গোসল করলেই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়। বরঞ্চ বেশি গরম পানিতে গোসল করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গরম পানিতে গোসল নয়, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আপনি ভাইরাস ঠেকাতে পারেন।

৪.রসুন খেলে কি সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে?: সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে এই ভাইরাস ঠেকাতে রসুন খাওয়ার বহু পরামর্শ চোখে পড়েছে। কিন্তু WHO বলছে, এই ধারণা ঠিক নয়। রসুন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার যার ভেতর জীবাণুনাশক কিছু উপাদান হয়তো রয়েছে। কিন্তু, নতুন এই করোনাভাইরাস ঠেকাতে রসুন কাজ করবে, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আদৌ নেই।

৫.কমবয়সীরা কি নিরাপদ, করোনা ভাইরাস কি শুধু বয়স্কদেরই হামলা করে?: যে কোনো বয়সের লোকই নতুন এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এটা ঠিক যে, বেশি বয়স্ক লোক এবং যারা অ্যাজমা, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের মত রোগে ভুগছেন, তাদের ওপর এই ভাইরাসের প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, কিন্তু অল্পবয়সীরাও এই ভাইরাসে সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।

৬.মশার কামড়ে কি করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে?: এখন পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে নেই যে মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে। নতুন এই করোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি, থুতুর মাধ্যমেই তা অন্যের শরীরে ঢোকে। সুতরাং কারো ভেতর এসব উপসর্গ দেখলে দূরে থাকুন।

৭.শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কি বাঁচা যাবে: এক কথায় উত্তর – না। শরীরে যদি একবার ভাইরাস ঢুকে যায়, তাহলে শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কোনো লাভ নেই। বরঞ্চ তাতে চোখ বা মুখের ক্ষতি হতে পারে।

৮.নিউমোনিয়ার টিকা কি কোভিড-১৯ ঠেকাবে?: এখন যে যে ধরনের নিউমোনিয়ার টিকা বাজারে রয়েছে, সেগুলো নতুন এই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। করোনা ভাইরাসের জন্য সম্পূর্ণ নতুন টিকা তৈরির কাজ চলছে।

৯.লবণ-পানি দিয়ে নাক ধুলে কি কাজ হবে?: না। লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে নিয়মিত নাক ধুয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায় এমন কোনো প্রমাণ এখনো নেই।

১০.আ্যন্টিবায়েটিক দিয়ে করোনা ভাইরাস ঠেকানো বা চিকিৎসা করা যাবে?: না। অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ভাইরাসের ক্ষেত্রেই কাজ করেনা। করোনা ভাইরাস একটি ভাইরাস এবং এটা ঠেকাতে বা এর চিকিৎসায় কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ঠিক নয়। তবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে যদি আপনি কোনো ব্যাকটেরিয়াতেও আক্রান্ত হন, তাহলে আপনাকে হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।

১১.করোনা ভাইরাসের কোনও ওষুধ আছে?: এখন পর্যন্ত নতুন এই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বা এর চিকিৎসায় কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যে সব শারীরিক উপসর্গ দেখা দেবে সেসব উপসর্গ – যেমন শ্বাসকষ্ট প্রশমনে রোগীকে সাহায্য করতে হবে। এখন পর্যন্ত সেটাই এর চিকিৎসা।

শেয়ার করুন
Exit mobile version