ঈদের আগে বেতন-ভাতা দেয়ার কথা থাকলেও নতুন এমপিওভুক্ত ২৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৫ ভাগ শিক্ষক-কর্মচারীই তা পাচ্ছেন না। ৩৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর ৪ হাজার ৯৮৫ জনের আবেদন শনিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গোটা প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে অনেকেই আবেদন করতে পারেননি। অনেকে আবার সময় শেষ হওয়ার পরও আবেদন করেছেন। এগুলোয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) আঞ্চলিক দফতরের কর্মকর্তারা হাতই দেননি। অপরদিকে সময়ের অভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোও সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারেনি। ফলে এই দুই ধরনের আবেদন স্থগিত বা পেন্ডিং রাখা হয়েছে।
বেশকিছু আবেদন নানা ত্রুটির কারণে বাতিল হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, তদবির করাতে না পারায় তাদেরটা ফাইলবন্ধি আছে। কেননা একই সঙ্গে আবেদন করার পরও কেউ কেউ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এমন অবস্থায় পেন্ডিং আবেদন নিষ্পত্তির কাজ অবশ্য শনিবারই শুরু হয়েছে। আর যারা আবেদন করেননি এবং যাদের আবেদন বাতিল হয়েছে- এই উভয় অংশ ২২ মে থেকে ফের আবেদন করতে পারবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, যাদের আবেদন শনিবার চূড়ান্ত অনুমোদিত হয়েছে, তারা ঈদের আগে বকেয়াসহ এপ্রিলের বেতন-ভাতা পাবেন। দুটি উৎসব এবং বৈশাখী ভাতাও দেয়া হবে। নিষ্পত্তি করা আবেদনের ব্যয়ের হিসাব করা হবে। প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রণালয় থেকে চেক অনুমোদনের গেজেট হবে।
পরে মাউশি মহাহিসাব নিরীক্ষকের দফতরের অনুমোদনক্রমে এমপিওর অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, যাদের আবেদন স্থগিত বা বাতিল হয়েছে তাদের চিন্তার কারণ নেই। চূড়ান্ত অনুমোদন হলেই তারা বকেয়াসহ বেতন-ভাতা পাবেন। নিষ্পত্তির কাজ আগামী অর্থবছরে গড়ালেও তারা আর্থিক সুবিধা পাবেন।
জানা গেছে, মাউশি, কারিগরি শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর- এই ৩ সংস্থা শনিবার পৃথক বৈঠকে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এর আগে ৪ ধাপে যাচাই শেষে আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুমোদন পায়। ফলে সারা দেশের স্কুল ও কলেজের ৩৫১৭ শিক্ষক-কর্মচারী মাউশির মাধ্যমে নতুন এমপিওভুক্ত হলেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ১২১ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ১৩৪৭ জনের আবেদন অনুমোদন করে। এর আগে গত ২-৭ মে পর্যন্ত আবেদন নেয়া হয়। তবে অনেকে ১০ মে পর্যন্ত আবেদন করে। তবে আঞ্চলিক অফিসগুলো ৭ মে পর্যন্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে। পরেরগুলো পেন্ডিং রাখা হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ১০ মে আবেদন করেও অনেকে এমপিও পেয়েছেন। মূলত যারা আঞ্চলিক দফতরের কর্মকর্তাদের ‘খুশি’ বা তদবির করতে পেরেছে, তারাই এ সুবিধা পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাউশির ঢাকার আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মনওয়ারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে ২৫৪টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ২০৭টি যাচাই করা সম্ভব হয়েছে। সময় স্বল্পতায় বাকিগুলো হয়নি। একটি আবেদনের সঙ্গে ৩০-৩২টি দলিল জমা করা হয়। সেগুলো যাচাই সময়সাপেক্ষ। জেলা থেকে আসা আবেদন প্রথমে পরিচালক পাঠান আঞ্চলিক সহকারী পরিচালকের কাছে। তিনি আবেদনের ৩০-৩২টি কাগজ দেখেন। পরে ফাইল অনুমোদন করে উপপরিচালকের কাছে পাঠান। পরে পরিচালক অনুমোদন করেন।
জানা গেছে, ঢাকা অঞ্চলে কলেজের যে ২০৭ আবেদন যাচাই শেষ হয়, এর মধ্যে ১০৫টি অনুমোদন পায়। বাকি ১০২টি বাতিল হয়েছে। আর নির্ধারিত সময়ের পর বা ৮ থেকে ১০ মে আরও ৮৮টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো সবই পেন্ডিং আছে। মাউশির সারা দেশে ৯টি আঞ্চলিক অফিস আছে। বাকি অঞ্চলেও নিষ্পত্তি, পেন্ডিং এবং বাতিলের হার প্রায় একই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগপত্র না থাকা বা অস্পষ্টতা, এনটিআরসিএ সনদের ঘাটতিসহ অনেক কারণে বাতিল হয়েছে।
অধ্যাপক মনওয়ারুল ইসলাম বলেন, আবেদন ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে হয়। তদবির বা খুশি করে এমপিওর আবেদন আগেভাগে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। ৭ দিন ধরে তারা নির্ঘুম কাটিয়ে আবেদন নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছেন। যাদের আবেদন বাতিল হয়েছে বা যারা আবেদন করতে পারেননি, তাদেরকে ফের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কাজ এগিয়ে রাখতে আমরা শনিবারই পেন্ডিং আবেদনগুলো যাচাই শুরু করে দিয়েছি। পেন্ডিং এবং নতুন আবেদন আগামী মাসে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
২২ মে থেকে ফের আবেদন: দ্বিতীয় দফায় শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আবেদন কার্যক্রম শুরু হবে ২২ মে। ৩১ মে পর্যন্ত অনলাইনে এমপিওভুক্তি ও কোড নম্বরের জন্য আবেদন করা যাবে। পরে সব আবেদন ৪ জুনের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা নিষ্পত্তি করবেন। ৮ জুনের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এবং ১৫ জুনের মধ্যে আঞ্চলিক কার্যালয়ে নিষ্পত্তি হবে।