বাংলাদেশে একটি বই প্রকাশনা সংস্থা স্থাপনের জন্য বিস্তারিত নির্দেশিকা: আইনি কাঠামো, নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং প্রাসঙ্গিক বিধিমালা
১৭ জুন ২০২৫, ২৩টি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ.আই. ব্যবহার করে এই প্রবন্ধটি তৈরি করেছেন: খোলা চোখ এর সম্পাদক ফরিদুল আলম সুমন
I. ভূমিকা
বাংলাদেশে বই প্রকাশনা শিল্প একটি গতিশীল এবং সম্প্রসারণশীল খাত, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা বহন করে। বর্তমানে, বাংলাদেশে ১,২০০-এর বেশি প্রকাশক সক্রিয় রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪০০টি বাণিজ্যিক, ৬৫০টি শিক্ষামূলক এবং ১৫০টি ধর্মীয় ও অন্যান্য বইয়ের প্রকাশক 1। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, মুদ্রণ ও ডিজিটাল উভয় ক্ষেত্রেই এই শিল্পের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫% 1। যদিও ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক ও শিক্ষামূলক প্রকাশনা খাতে আয়ের কিছুটা হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে (বাণিজ্যিক প্রকাশনায় ৮% এবং শিক্ষামূলক প্রকাশনায় ৬% হ্রাস), ই-বুক বাজারের উত্থান নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে 1। বাংলাদেশে ই-বুকের ব্যবহার এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে 1।
প্রকাশনা শিল্পের এই গতিশীলতা একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ইকোসিস্টেমের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে নতুন প্রবেশকারীদের জন্য কৌশলগত সুযোগ বিদ্যমান। ঐতিহ্যবাহী মুদ্রণ খাতগুলো কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, সামগ্রিক বাজারের প্রবৃদ্ধি ডিজিটাল গ্রহণের মাধ্যমে চালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, একজন নতুন প্রকাশকের জন্য কেবল বিদ্যমান মডেলগুলো অনুসরণ না করে একটি হাইব্রিড বা ডিজিটাল-প্রথম কৌশল বিবেচনা করা ফলপ্রসূ হতে পারে। বর্তমান প্রকাশকদের মধ্যে “পেশাদার দক্ষতার অভাব বা আধুনিক প্রযুক্তির অভাব” 2 এবং “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে অসচেতনতা” 3 প্রযুক্তি-সচেতন নতুন প্রবেশকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা তৈরি করতে পারে। এই প্রতিবেদনটির লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে একটি বই প্রকাশনা সংস্থা স্থাপনের জন্য একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রদান করা। এর মধ্যে আইনি কাঠামো নির্বাচন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সংশ্লিষ্ট ফি, সময়সীমা এবং প্রকাশনা শিল্পের জন্য প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক সম্মতি (যেমন মেধা সম্পত্তি অধিকার এবং সেন্সরশিপ) অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি এই খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলোও আলোচনা করবে, যাতে সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা যায়।
II. ব্যবসার আইনি কাঠামো নির্বাচন
বাংলাদেশে একটি বই প্রকাশনা সংস্থা স্থাপনের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো উপযুক্ত আইনি কাঠামো নির্বাচন করা। এই সিদ্ধান্ত দায়বদ্ধতা, মূলধন সংগ্রহ, নিয়ন্ত্রক সম্মতি এবং জনমতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। একটি প্রকাশনা সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং ঝুঁকি সহনশীলতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি কাঠামো নির্বাচন করা অত্যাবশ্যক।
- একক মালিকানা (Sole Proprietorship): সুবিধা ও অসুবিধাএকক মালিকানা বাংলাদেশের সবচেয়ে সরল এবং কম ব্যয়বহুল ব্যবসায়িক কাঠামো 4। এটি স্থাপন করা সহজ এবং ন্যূনতম নিয়ন্ত্রক সম্মতি প্রয়োজন 4। একজন একক মালিক হিসেবে, উদ্যোক্তার ব্যবসার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং সমস্ত আয় তিনি নিজেই ভোগ করেন 4। তবে, এই কাঠামোর উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একক মালিকানা তার মালিক থেকে আইনত পৃথক সত্তা নয়; এর ফলে মালিক ব্যবসার সমস্ত দায়বদ্ধতার জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকেন এবং তার ব্যক্তিগত সম্পদ ঝুঁকিতে থাকে 4। মূলধন সংগ্রহের ক্ষমতা মালিকের ব্যক্তিগত অর্থ এবং ব্যবসার লাভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে 4। এই কাঠামোর কোনো চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার নেই, অর্থাৎ মালিকের মৃত্যুর সাথে সাথে ব্যবসার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে 4। এছাড়াও, একক মালিকানার জনমত তুলনামূলকভাবে কম, যা এটিকে “গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার জন্য সবচেয়ে কম পছন্দের” করে তোলে এবং উচ্চ-যোগ্য কর্মচারী বা সিনিয়র স্তরের নির্বাহী আকর্ষণ করা কঠিন করে তোলে 4। এটি শুধুমাত্র খুব ছোট, একক-মালিকানাধীন ব্যবসার জন্য উপযুক্ত যেখানে ঝুঁকি ন্যূনতম। প্রকাশনার মতো একটি ব্যবসার জন্য, যেখানে মেধা সম্পত্তি অধিকার এবং সম্ভাব্য আইনি দায়বদ্ধতা জড়িত, এটি সাধারণত আদর্শ কাঠামো হিসেবে বিবেচিত হয় না।
- অংশীদারি ব্যবসা (Partnership Firm): সুবিধা ও অসুবিধাএকটি অংশীদারি ব্যবসা একক মালিকানার তুলনায় যৌথ মূলধন এবং ব্যবস্থাপনার সুযোগ দেয়, যেখানে ন্যূনতম ২ জন অংশীদার প্রয়োজন 5। এটি অংশীদারদের মধ্যে দায়িত্ব, দক্ষতা এবং মূলধন ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে। তবে, একক মালিকানার মতোই, অংশীদারি ব্যবসাতেও অংশীদারদের দায়বদ্ধতা সীমাহীন থাকে 5। এর অর্থ হলো, অংশীদাররা ব্যবসার সমস্ত ঋণ এবং বাধ্যবাধকতার জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকেন, যা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদকে ঝুঁকিতে ফেলে। ব্যবসার মেয়াদ অংশীদারদের জীবনের সাথে যুক্ত থাকে, এবং অংশীদারদের মৃত্যুর পর ব্যবসা পুনর্গঠনের প্রয়োজন হতে পারে 5। অংশীদারি ব্যবসা বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য শেয়ার ইস্যু করতে পারে না এবং এটি অন্য কোনো ব্যবসার মালিকানাধীন হতে পারে না 5। অংশীদারদের অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে 5। যদিও এটি একক মালিকানার চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে 5, তবে এর মূলধন সংগ্রহের ক্ষমতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমিত। প্রকাশনার মতো মূলধন-নিবিড় শিল্পের (যেমন মুদ্রণ খরচ, বিপণন, লেখকের অগ্রিম) জন্য এই সীমাবদ্ধতাগুলি গুরুত্বপূর্ণ। লাভ ব্যক্তিগত হারে করযোগ্য হয় এবং বার্ষিক সভা করা আবশ্যক 5। এই কাঠামোতে সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদার থাকতে পারে 5।
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company): সুবিধা ও অসুবিধাবাংলাদেশে একটি বই প্রকাশনা সংস্থা স্থাপনের জন্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (PLC) কাঠামোটি স্থানীয় এবং বিদেশী উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে প্রস্তাবিত এবং জনপ্রিয় 6। এই কাঠামোটি দায়বদ্ধতা সুরক্ষা, মূলধন সংগ্রহ এবং পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে। একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ন্যূনতম ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন শেয়ারহোল্ডার/সদস্য থাকতে পারে 5। এর জন্য ন্যূনতম ২ জন পরিচালক প্রয়োজন 5। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো, শেয়ারহোল্ডারদের দায়বদ্ধতা তাদের বিনিয়োগকৃত শেয়ারের পরিমাণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, যা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদকে ব্যবসার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে 5। প্রকাশনা সংস্থার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে সম্ভাব্য কপিরাইট বিরোধ বা চুক্তিভিত্তিক দায়বদ্ধতার ঝুঁকি থাকে।প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির “চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার” রয়েছে 5, যার অর্থ হলো প্রতিষ্ঠাতাদের পরেও ব্যবসা তার অস্তিত্ব বজায় রাখে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। এই কাঠামোটি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য শেয়ার ইস্যু করতে পারে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে সহজ হয় 5। এটি একক মালিকানা এবং অংশীদারি ব্যবসার “সীমিত মূলধন” সমস্যার সমাধান করে। একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি অন্য কোনো ব্যবসার মালিকানাধীনও হতে পারে 5। যদিও এর কঠোর নিয়ন্ত্রক সম্মতি প্রয়োজনীয়তা এবং বার্ষিক নিরীক্ষিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে 5, তবে উন্নত বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৃদ্ধির সম্ভাবনার জন্য এগুলি গ্রহণযোগ্য বিনিময়। কোম্পানির লাভ কর্পোরেট হারে করযোগ্য হয় (অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২৭.৫%) 5। এই কাঠামো বিদেশী কর্মী নিয়োগের যোগ্যতাও প্রদান করে 5। বাংলাদেশে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম মূলধন থ্রেশহোল্ড নেই 5, তবে কার্যকারিতার জন্য সাধারণত ১,০০,০০০+ টাকা মূলধন রাখা হয় 7। এই কাঠামোটি স্টেকহোল্ডারদের কাছে তুলনামূলকভাবে বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে, যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী, উচ্চ-যোগ্য কর্মচারী এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে 5। এটি বিশেষ করে “পেশাদার দক্ষতার অভাব” 2 এবং “দেশীয় ও বিদেশী প্রকাশকদের মধ্যে যৌথ প্রকাশনা উৎসাহিত করার উদ্যোগ” 1 এর মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা একটি শিল্পের জন্য প্রাসঙ্গিক।
- অন্যান্য কাঠামো:
- পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি: এটি সাধারণত অনেক বড় উদ্যোগের জন্য উপযুক্ত, যেখানে জনসাধারণের কাছে শেয়ার অফার করার পরিকল্পনা থাকে। এর জন্য ন্যূনতম ৭ জন শেয়ারহোল্ডার এবং ৩ জন পরিচালক প্রয়োজন এবং আরও বেশি নিয়ন্ত্রক সম্মতি মেনে চলতে হয় 7।
- ওয়ান পার্সন কোম্পানি (OPC): এটি সম্প্রতি চালু হওয়া একটি বিকল্প, যা একক শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালককে অনুমতি দেয় 6। তবে, এর জন্য ন্যূনতম ২৫ লাখ টাকা মূলধন প্রয়োজন 7, যা নতুন প্রকাশকদের জন্য একটি বাধা হতে পারে।
- প্রকাশনা সংস্থার জন্য প্রস্তাবিত কাঠামো:বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, একটি বই প্রকাশনা সংস্থার জন্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (PLC) সবচেয়ে প্রস্তাবিত কাঠামো। এটি সীমিত দায়বদ্ধতা সুরক্ষা, মূলধন সংগ্রহের নমনীয়তা, চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার এবং বর্ধিত বিশ্বাসযোগ্যতার সর্বোত্তম ভারসাম্য প্রদান করে, যা প্রকাশনা খাতে দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- আবশ্যিক টেবিল: ব্যবসার আইনি কাঠামোর তুলনামূলক চিত্র
বৈশিষ্ট্য | একক মালিকানা (Sole Proprietorship) | অংশীদারি ব্যবসা (Partnership Firm) | প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company) |
মালিক/শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা | শুধুমাত্র একজন 5 | সর্বনিম্ন ২, সর্বোচ্চ ২০ 5 | সর্বনিম্ন ২, সর্বোচ্চ ৫০ 5 |
দায়বদ্ধতা | সীমাহীন 4 | সীমাহীন 5 | সীমিত 5 |
পৃথক আইনি সত্তা | না 4 | নিবন্ধিত হলে পৃথক আইনি সত্তা 5 | হ্যাঁ 5 |
চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার | না 4 | অংশীদারদের মৃত্যু পর্যন্ত 5 | হ্যাঁ 5 |
মূলধন সংগ্রহ | ব্যক্তিগত অর্থের উপর সীমাবদ্ধ 4 | সীমিত, শেয়ার ইস্যু করতে পারে না 5 | শেয়ার ইস্যু করতে পারে, অর্থায়নে সহজ প্রবেশাধিকার 5 |
বিশ্বাসযোগ্যতা | তুলনামূলকভাবে কম 5 | একক মালিকানার চেয়ে বেশি 5 | তুলনামূলকভাবে বেশি 5 |
করারোপণ | ব্যক্তিগত আয়কর হারে 4 | ব্যক্তিগত আয়কর হারে 5 | কর্পোরেট কর হারে (অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২৭.৫%) 5 |
বার্ষিক নিরীক্ষিত প্রতিবেদন | না 5 | পরোক্ষভাবে প্রয়োজন 5 | হ্যাঁ 5 |
বিদেশী মালিকানা | বিদেশীদের জন্য বিকল্প নয় 4 | অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে 5 | ১০০% বিদেশী শেয়ারহোল্ডিং অনুমোদিত 5 |
কর্তৃপক্ষ | ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন 5 | আরজেএসসি (RJSC) 5 | আরজেএসসি (RJSC) 5 |
III. কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়া: ধাপ ও কাগজপত্র
বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি মূলত রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC) দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি বহু-ধাপের প্রক্রিয়া যার জন্য সতর্কতার সাথে নথি প্রস্তুত এবং জমা দিতে হয়।
- রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC) থেকে নাম ছাড়পত্রকোম্পানি নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হলো RJSC থেকে নাম ছাড়পত্র (Name Clearance) গ্রহণ করা 6। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তাবিত কোম্পানির নামটি অনন্য এবং উপলব্ধ কিনা তা নিশ্চিত করা হয়, যা পরবর্তীতে কোনো দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে। আবেদন RJSC পোর্টালে অনলাইনে জমা দিতে হয় 6। প্রতিটি প্রস্তাবিত নামের জন্য ১০০ টাকা ফি প্রদান করতে হয় 6। নাম ছাড়পত্র সার্টিফিকেট পাওয়ার পর, এটি ৩০ দিনের জন্য বৈধ থাকে 5, যা পরবর্তী পদক্ষেপগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার গুরুত্ব নির্দেশ করে। ব্র্যান্ডিংয়ের আগে নামের উপলব্ধতা যাচাই না করা একটি সাধারণ ভুল হিসেবে বিবেচিত হয় 7।
- মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MoA) এবং আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন (AoA) তৈরিএগুলো কোম্পানির দুটি অপরিহার্য সাংবিধানিক নথি 6। মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MoA) কোম্পানির উদ্দেশ্য, শেয়ার মূলধন এবং শেয়ারহোল্ডারদের বিবরণ সংজ্ঞায়িত করে 6। এটিতে ব্যবসার প্রাথমিক উদ্দেশ্য, পরিশোধিত ও অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ এবং শেয়ারহোল্ডারদের তালিকা ও তাদের শেয়ারহোল্ডিং উল্লেখ করা উচিত 6। আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন (AoA) কোম্পানির অভ্যন্তরীণ শাসনের নিয়মাবলী, পরিচালকদের ভূমিকা, সভার পদ্ধতি এবং নিরীক্ষক নিয়োগের বিবরণ বর্ণনা করে 6। এতে পরিচালকদের তালিকা ও সংখ্যা, বোর্ডের ক্ষমতা, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা, সভার প্রক্রিয়া, কোরাম, নোটিশ পদ্ধতি এবং নিরীক্ষক নিয়োগের বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত 6। একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য ন্যূনতম ২ জন শেয়ারহোল্ডার এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য ৭ জন শেয়ারহোল্ডার প্রয়োজন 6। পরিচালকদের ন্যূনতম একটি শেয়ার ধারণ করতে হয় 6। এই নথিগুলোর সতর্কতার সাথে খসড়া তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কোম্পানির উদ্দেশ্য, কাঠামো এবং পরিচালনার নিয়মাবলী নির্ধারণ করে। ব্যবসার উদ্দেশ্যগুলি সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত না হলে ভবিষ্যতে ব্যবসার সম্প্রসারণ সীমিত হতে পারে, যার জন্য ব্যয়বহুল সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।
- অস্থায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও মূলধন জমানাম ছাড়পত্র পাওয়ার পর, প্রস্তাবিত কোম্পানির নামে একটি অস্থায়ী (অ-কার্যকরী) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় 6। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি প্রায়শই নন-রেসিডেন্ট টাকা অ্যাকাউন্ট (NRTA) নামে পরিচিত 9। এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নাম ছাড়পত্র সার্টিফিকেট, MoA ও AoA-এর খসড়া এবং NRTA খোলার জন্য বোর্ড রেজোলিউশন (যদি প্রযোজ্য হয়) সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয় 9। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য, পরিশোধিত মূলধন এই অ্যাকাউন্টে রেমিট করতে হয় 5। ব্যাংক থেকে মূলধন প্রাপ্তির নিশ্চিতকরণ হিসেবে একটি এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেট (Encashment Certificate) সংগ্রহ করতে হয় 5। যদি সমস্ত শেয়ারহোল্ডার বাংলাদেশী হন, তবে এই এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না 6। কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য কোনো ন্যূনতম বা সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন নির্ধারিত নেই 7। তবে, বিদেশী কর্মীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট এবং অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য USD ৫০,০০০ 8 বা USD ১,০০,০০০ 6 মূলধন আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে শুধুমাত্র ন্যূনতম আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা ব্যবহারিক সুবিধা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
- RJSC-তে নথি জমা দেওয়াএটি আনুষ্ঠানিক আবেদন প্রক্রিয়া যেখানে সমস্ত প্রস্তুতকৃত নথি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়। ডিজিটাল জমা: স্বাক্ষরিত MoA, AoA এবং অন্যান্য ফর্ম RJSC পোর্টালে আপলোড করতে হয় এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট স্লিপের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হয় 6। ভৌত জমা: স্বাক্ষরিত MoA ও AoA (নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সহ), পরিচালকের সম্মতি (ফর্ম IX), সম্মতিদানকারী পরিচালকদের তালিকা (ফর্ম X), পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা এজেন্টদের তালিকা (ফর্ম XII), মূল এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেট, নাম ছাড়পত্র সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত পেমেন্ট স্লিপের হার্ড কপি RJSC-তে জমা দিতে হয় 6। প্রয়োজনীয় সকল ফর্ম RJSC ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায় 9।
- ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তিনথি জমা দেওয়ার ৩-৫ কার্যদিবসের মধ্যে 6 অথবা ৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে 7 RJSC ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট, MoA ও AoA-এর ডিজিটাল সার্টিফাইড কপি এবং পরিচালকদের তালিকা (ফর্ম XII) ইস্যু করে 5। এই সার্টিফিকেট কোম্পানির আনুষ্ঠানিক আইনি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে। সার্টিফিকেট পাওয়ার পর, অস্থায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্টটিকে একটি নিয়মিত ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে রূপান্তরিত করতে হয় 5, যা কোম্পানির সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেন শুরু করার জন্য অপরিহার্য।
- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) এর সাথে নিবন্ধন (যদি প্রযোজ্য হয়)বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) বিদেশী বিনিয়োগ সহজতর করে 6। শিল্প বা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির জন্য BIDA-এর সাথে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক 6। BIDA প্রবাসীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা সুপারিশ, রয়্যালটি, ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং প্রযুক্তিগত ফি রেমিটেন্সের অনুমোদন এবং শিল্প প্লট ও ইউটিলিটি অধিগ্রহণে সহায়তা প্রদান করে 6। বাণিজ্যিক বা ট্রেডিং কোম্পানিগুলির জন্য BIDA নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয় 6। BIDA নিবন্ধন পেতে প্রায় ৩০ কার্যদিবস সময় লাগে 6। একটি বই প্রকাশনা সংস্থা যদি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক বা ট্রেডিং কার্যক্রমে জড়িত থাকে (যেমন নিজস্ব মুদ্রণ প্রেস না থাকে), তাহলে BIDA নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নাও হতে পারে। তবে, যদি বিদেশী কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা থাকে বা শিল্প-স্তরের মুদ্রণ সুবিধা স্থাপনের ইচ্ছা থাকে, তাহলে BIDA নিবন্ধন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
- আবশ্যিক টেবিল: RJSC নিবন্ধন ফি
ফি’র প্রকার | প্রাইভেট কোম্পানি (BDT) | পাবলিক কোম্পানি (BDT) | বিদেশী কোম্পানি (যোগাযোগ/শাখা অফিস) (BDT) |
নাম ছাড়পত্র ফি (প্রতি প্রস্তাবিত নাম) | ১০০ 9 | ১০০ 9 | প্রযোজ্য নয় (শাখা/যোগাযোগ অফিস) |
স্ট্যাম্প ফি (MoA) | ৫০০ 9 | ৫০০ 9 | প্রযোজ্য নয় (বিদেশী কোম্পানির জন্য MoA/AoA ফি ভিন্ন) |
স্ট্যাম্প ফি (AoA) – অনুমোদিত মূলধনের উপর ভিত্তি করে: | |||
১০,০০,০০০ পর্যন্ত | ২,০০০ 9 | ২,০০০ 9 | প্রযোজ্য নয় |
১০,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০,০০০ | ৪,০০০ 9 | ৪,০০০ 9 | প্রযোজ্য নয় |
৩,০০,০০,০০০ এর উপরে | ১০,০০০ 9 | ১০,০০০ 9 | প্রযোজ্য নয় |
নিবন্ধন ফি (নথি দাখিল): | |||
৬টি নথি | ১,২০০ 9 | প্রযোজ্য নয় | ১,২০০ 9 |
৮ বা ৯টি নথি | প্রযোজ্য নয় | ১,৬০০-১,৮০০ 9 | প্রযোজ্য নয় |
নিবন্ধন ফি (অনুমোদিত শেয়ার মূলধন): | |||
২০,০০০ পর্যন্ত | ০.০০ 10 | ০.০০ 10 | প্রযোজ্য নয় |
২০,০০০ এর পর প্রতি ১০,০০০ এর জন্য (৫০,০০০ পর্যন্ত) | ০.০০ 10 | ০.০০ 10 | প্রযোজ্য নয় |
৫০,০০০ এর পর প্রতি ১০,০০০ এর জন্য (১০,০০,০০০ পর্যন্ত) | ০.০০ 10 | ০.০০ 10 | প্রযোজ্য নয় |
১০,০০,০০০ এর পর প্রতি ১,০০,০০০ এর জন্য (৫০,০০,০০০ পর্যন্ত) | ৫০.০০ 10 | ৫০.০০ 10 | প্রযোজ্য নয় |
৫০,০০,০০০ এর পর প্রতি ১,০০,০০০ এর জন্য | ৮০.০০ 10 | ৮০.০০ 10 | প্রযোজ্য নয় |
ডিজিটাল সার্টিফিকেট ইস্যু ফি | ০.০০ 10 | ০.০০ 10 | ০.০০ (পরোক্ষভাবে) 10 |
নাম ছাড়পত্র ও নিবন্ধনের আনুমানিক সময় | ৭-১০ কার্যদিবস 7 | ৭-১০ কার্যদিবস 7 | ৭-১০ কার্যদিবস 7 |
IV. নিবন্ধন পরবর্তী আবশ্যিক লাইসেন্স ও সনদপত্র
কোম্পানি ইনকর্পোরেশন একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র। আইনত ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি প্রকাশনা সংস্থাকে আরও বেশ কয়েকটি লাইসেন্স এবং নিবন্ধন গ্রহণ করতে হয়।
- ট্রেড লাইসেন্স (Trade License)ট্রেড লাইসেন্স যেকোনো ব্যবসার জন্য একটি মৌলিক এবং বাধ্যতামূলক প্রয়োজন 4। এটি স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা কর্তৃক ইস্যু করা হয় 6। ট্রেড লাইসেন্স এক বছরের জন্য বৈধ থাকে এবং প্রতি বছর নবায়ন করতে হয় 4। এর খরচ প্রায় USD ২০০ 6 বা BDT ২,০০০ 13। ব্যবসার ধরন ও প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ফি BDT ১০০ থেকে BDT ৪০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে; লিমিটেড কোম্পানির জন্য ফি পরিশোধিত মূলধনের উপর নির্ধারিত হয় 11। আবেদন ফি BDT ১০ 14। ট্রেড লাইসেন্স পেতে সাধারণত ৩-৪ কার্যদিবস 6 থেকে ১০-১৫ কার্যদিবস 11 সময় লাগতে পারে। একটি স্থানীয় বাণিজ্যিক ঠিকানা থাকা ট্রেড লাইসেন্সের জন্য অপরিহার্য 4।আবেদন প্রক্রিয়া: আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট জোনাল অফিস থেকে নির্ধারিত আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে হয় 11। পূরণকৃত ফর্মটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ট্যাক্সেশন অফিসারের কাছে জমা দিতে হয় 11। ই-ট্রেড লাইসেন্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন আবেদনও সম্ভব 12। এরপর সিটি কর্পোরেশন অফিসের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এবং লাইসেন্সিং সুপারভাইজার কর্তৃক পরিদর্শন করা হয় 11। নির্ধারিত ফি পরিশোধের পর ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা যায় 11। ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে টিআইএন, MoA, AoA এবং ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট অন্তর্ভুক্ত থাকে 7। এর অর্থ হলো, কোম্পানি নিবন্ধন এবং টিআইএন প্রাপ্তির পরই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা সম্ভব, যা নিবন্ধন প্রক্রিয়াগুলির একটি ক্রমিক নির্ভরতা নির্দেশ করে।
- আবশ্যিক টেবিল: ট্রেড লাইসেন্স ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আইটেম | বিবরণ | সূত্র |
ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ | স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ | 6 |
বৈধতা | ১ বছর, বার্ষিক নবায়নযোগ্য | 7 |
আবেদন ফি | BDT ১০.০০ | 14 |
লাইসেন্স ফি | ব্যবসার ধরন/প্রকৃতির উপর নির্ভর করে BDT ১০০-৪০,০০০ পর্যন্ত; লিমিটেড কোম্পানির জন্য পরিশোধিত মূলধনের উপর ভিত্তি করে। আনুমানিক USD ২০০ বা BDT ২,০০০। | 6 |
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (সাধারণ): | ||
আবেদন ফর্ম | মূল | 11 |
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) | সত্যায়িত কপি | 11 |
ভাড়া রশিদ বা মালিকানার প্রমাণ | ব্যবসার ঠিকানার জন্য | 11 |
হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ | 11 | |
উদ্যোক্তার পাসপোর্ট আকারের ছবি (৩ কপি) | সত্যায়িত | 11 |
নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ঘোষণা | সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের নিয়মাবলী মেনে চলার জন্য | 11 |
এলাকার অনাপত্তি ঘোষণা (NOC) | 11 | |
অবস্থান মানচিত্র/স্কেচ | 11 | |
ফায়ার লাইসেন্স | সত্যায়িত কপি (যদি প্রযোজ্য হয়) | 11 |
পরিবেশগত ছাড়পত্র | সত্যায়িত কপি (যদি প্রযোজ্য হয়) | 11 |
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (লিমিটেড কোম্পানির জন্য): | ||
মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন (MoA) ও আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন (AoA) | সত্যায়িত কপি | 7 |
ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট | সত্যায়িত কপি | 7 |
টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট | সত্যায়িত কপি | 7 |
ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট | মূল | 11 |
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (অংশীদারি ব্যবসার জন্য): | ||
অংশীদারি চুক্তি | সত্যায়িত কপি | 11 |
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (বিদেশী বিনিয়োগকারী/কর্মচারীদের জন্য): | ||
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BOI) থেকে ওয়ার্ক পারমিট | সত্যায়িত কপি | 11 |
আনুমানিক প্রক্রিয়াকরণের সময় | ৩-৪ কার্যদিবস (সাধারণত) থেকে ১০-১৫ কার্যদিবস | 7 |
- ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN) নিবন্ধনট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN) প্রাপ্তি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ভ্যাট নিবন্ধন এবং কর ফাইল করার জন্য বাধ্যতামূলক 7। এটি ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (NBR) পোর্টালের মাধ্যমে বিনামূল্যে এবং ইলেকট্রনিকভাবে ইস্যু করা হয় 6। সাধারণত এটি পেতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে 8। টিআইএন প্রাপ্তি কোম্পানির আর্থিক ও কর সংক্রান্ত পরিচিতি স্থাপনের জন্য একটি মৌলিক প্রয়োজন।
- ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (VAT) নিবন্ধনকোম্পানিগুলোকে ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (NBR) এর অধীনে কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনের সাথে নিবন্ধন করতে হয় 6। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (BIN) সার্টিফিকেট পাওয়া যায় 7। ভ্যাট নিবন্ধন সাধারণত ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয় 6। লিমিটেড কোম্পানিগুলির জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক 5। এটি ব্যবসার রাজস্ব কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মতি।
- ফায়ার লাইসেন্স (Fire License)ফায়ার প্রিভেনশন অ্যান্ড এক্সটিংকশন অ্যাক্ট ২০০৩ অনুযায়ী ফায়ার লাইসেন্স বাধ্যতামূলক 6। এটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক ইস্যু করা হয় 6। ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় নথি 11।
- পরিবেশগত ছাড়পত্র (Environmental Clearance Certificate – যদি প্রযোজ্য হয়)যেসব শিল্প পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যারা বিপজ্জনক উপকরণ ব্যবহার বা উৎপাদন করে, তাদের জন্য এই ছাড়পত্র প্রয়োজন 6। এটি পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ইস্যু করা হয় 6। ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় নথি 11।
V. বই প্রকাশনার জন্য নির্দিষ্ট বিধিমালা ও লাইসেন্স
সাধারণ ব্যবসা নিবন্ধন ছাড়াও, প্রকাশনা শিল্পের নিজস্ব নির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে যা বিষয়বস্তু, মেধা সম্পত্তি এবং বিতরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- কপিরাইট আইন: ২০০০ সালের কপিরাইট আইন ও ২০২৩ সালের নতুন বিলবাংলাদেশে কপিরাইট আইন ২০০০ সালের কপিরাইট আইন দ্বারা পরিচালিত হয় 15। কপিরাইট ফাইল করা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার কর্তৃক পরিচালিত হয় 15। এই আইন সাহিত্যিক/নাটকীয় কাজ, সঙ্গীত কর্ম, কম্পিউটার সফটওয়্যার, চলচ্চিত্র, শিল্পকর্ম এবং সাউন্ড রেকর্ডিংকে সুরক্ষা প্রদান করে 15। এছাড়াও, ব্রডকাস্ট, টেলিকাস্ট, ই-মেইল, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমও এর আওতাভুক্ত 15। কপিরাইট মালিকের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে তার কাজ পুনরুৎপাদন, প্রকাশ, অনুবাদ, অভিযোজন, জনসমক্ষে প্রদর্শন, সম্প্রচার, চলচ্চিত্র বা সাউন্ড রেকর্ডিং তৈরি এবং কপি ইস্যু করার 15। লেখকের বিশেষ অধিকারও রয়েছে, যেমন তার লেখকত্ব দাবি করা এবং কাজের কোনো বিকৃতি, অঙ্গহানি বা অন্য কোনো পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া 15। কপিরাইট আইন ২০০০ বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্সের (মালিক কর্তৃক, বাধ্যতামূলক, অনুবাদ, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পুনরুৎপাদন) বিধান রাখে 15 এবং কপিরাইট লঙ্ঘন ও ন্যায্য ব্যবহারের বিস্তারিত বিধান বর্ণনা করে 15। লঙ্ঘনের জন্য দেওয়ানি প্রতিকার (ক্ষতিপূরণ, নিষেধাজ্ঞা) এবং ফৌজদারি শাস্তি (কারাদণ্ড, জরিমানা) উভয়ই প্রযোজ্য 15।২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন কপিরাইট বিল ২০২৩ পাস হয়েছে, যা ২০০০ সালের কপিরাইট আইনকে প্রতিস্থাপন করবে 17। এই নতুন আইন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং শিল্পের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে 17। এটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) ক্ষেত্রের ডিজিটাল সরঞ্জাম থেকে উদ্ভূত পণ্য, কার্যক্রম, ডেটাবেস এবং ডিজাইনকে কপিরাইট সুরক্ষার আওতায় এনেছে 17। বিলটিতে বেনামী বা ছদ্মনামী কাজের মালিক, ডেটাবেস, পাবলিক ডোমেইন, প্রযোজক, ব্যক্তি, লোকগান এবং লোকসংস্কৃতি সহ বিভিন্ন পদের হালনাগাদ সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে 17। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বিল প্রথমবারের মতো লোকসংগীত, গান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কপিরাইটকে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা প্রদান করেছে 17। এটি মেধা সম্পত্তি আইন প্রয়োগের জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করে, যা TRIPS-এর মতো আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ 17। এই পরিবর্তনগুলি প্রকাশনা সংস্থার ব্যবসায়িক মডেল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং ই-বুকগুলিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকাশকরা এখন আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন, কারণ তাদের অধিকারগুলি আরও সুরক্ষিত। তবে, এর অর্থ হল, ডিজিটাল পণ্য এবং ডেটাবেসের বর্ধিত আওতার কারণে অন্যদের কপিরাইট লঙ্ঘনের আইনি ঝুঁকির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
- আবশ্যিক টেবিল: কপিরাইট সুরক্ষার সময়কাল
কাজের প্রকার | সুরক্ষার সময়কাল | সূত্র |
সাহিত্যিক, নাটকীয়, সঙ্গীত, শিল্পকর্ম (প্রকাশিত, কম্পিউটার সফটওয়্যার সহ) | লেখকের জীবনকাল + মৃত্যুর পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
মরণোত্তর কাজ | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
চলচ্চিত্র | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
সাউন্ড রেকর্ডিং | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
ফটোগ্রাফ | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
কম্পিউটার প্রোগ্রাম | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
বেনামী এবং ছদ্মনামী কাজ (ফটোগ্রাফ ব্যতীত) | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর (যদি লেখক পরিচিত হন তবে মেয়াদ বাড়ে) | 15 |
সরকারি কাজ, পাবলিক আন্ডারটেকিং, আন্তর্জাতিক সংস্থা | প্রথম প্রকাশের পর পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছর থেকে ৬০ বছর | 15 |
- আইএসবিএন (ISBN) নিবন্ধনআইএসবিএন (International Standard Book Number) হলো একটি অনন্য শনাক্তকরণ নম্বর যা বইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় 18। বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থাগার (National Library of Bangladesh) আইএসবিএন-এর জাতীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করে এবং এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সংযুক্ত 18। প্রকাশকদের জন্য আইএসবিএন ব্লক আকারে উপলব্ধ থাকে, যার মধ্যে ক্ষুদ্রতম ব্লকটি ১০টি নম্বরের 18। লেখকরা প্রতিটি একক শিরোনামের জন্য একটি আইএসবিএন পেতে পারেন 18। একটি বইয়ের প্রতিটি সংস্করণ এবং ভিন্নতার (যেমন ই-বুক, পেপারব্যাক এবং হার্ডকভার) জন্য আলাদা আইএসবিএন প্রয়োজন হয় 18। আইএসবিএন পেতে সাধারণত কমপক্ষে দুই কার্যদিবস সময় লাগে 18। লেখক ও প্রকাশকদের জন্য আলাদা আবেদন ফর্ম রয়েছে যা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ পূরণ করে জমা দিতে হয় 18। আইএসবিএন ফি ৫০ টাকা 18। সিরিয়াল/সাময়িকী/জার্নাল (এগুলো ISSN-এর জন্য উপযুক্ত), রেকর্ড বই, বিনোদনমূলক মিডিয়া, কম্পিউটার গেম/অ্যাপ্লিকেশন, মিউজিক স্কোর, সীমাবদ্ধ কোর্স বই এবং ওয়েবসাইট আইএসবিএন-এর জন্য যোগ্য নয় 18। আইএসবিএন একটি বইকে সঠিকভাবে ক্যাটালগ, ট্র্যাক এবং প্রধান বিতরণ চ্যানেল (বইয়ের দোকান, অনলাইন খুচরা বিক্রেতা, লাইব্রেরি) এর মাধ্যমে বিক্রি করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বই সেন্সরশিপ ও প্রকাশনার উপর নিয়ন্ত্রণবাংলাদেশে প্রকাশকরা একটি নিয়ন্ত্রক পরিবেশে কাজ করেন যেখানে সরকারি তদারকি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেন্সরশিপ বিদ্যমান, বিশেষ করে বিদেশী কাজ বা সংবেদনশীল বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে। “পাবলিকেশন অফ বুকস (রেগুলেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৫” 19 বিদেশী বই বা কাজ মুদ্রণ ও প্রকাশের জন্য সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। যদি কোনো বই “ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী” হয়, তবে অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে 19। এই বিধান লঙ্ঘন করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে এবং বই বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে 19। “প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৩” 20 মুদ্রণ প্রেস রাখা, সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশ এবং বই নিবন্ধনের জন্য ঘোষণার বিধান রাখে।বাংলাদেশের সংবিধানে বাক স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকলেও, তা নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধের অধীন 21। সরকার সমালোচনামূলক ওয়েবসাইট ব্লক করতে এবং অনলাইন ট্র্যাফিকের উপর নজরদারি করতে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে 21। সম্পাদকরা প্রায় ৫০% থেকে ৮০% খবর স্ব-সেন্সর করেন যাতে সরকারের সাথে কোনো সমস্যা না হয় 21। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যম দমনের হাতিয়ার হিসেবে সমালোচনা করা হয়, যা বিনা ওয়ারেন্টে সাংবাদিককে গ্রেফতার এবং জামিন সীমাবদ্ধ করার অনুমতি দেয় 21। অতীতে, তাসলিমা নাসরিনের “ওয়াইল্ড উইন্ড”, “লজ্জা” এবং “মাই গার্লহুড” এর মতো বই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিল 21। সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর বই “উগ্রবাদ প্রচারের” অভিযোগে মসজিদ ও গ্রন্থাগার থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল 21। সম্প্রতি, দিয়ার্শি আরাগের “দিয়া আরেফিন” এবং “দিয়া আরেফিনের নানীর বাণী” বই দুটি “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের” অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে 21। এই পরিস্থিতি একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থার জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে, বিশেষ করে যদি অনুবাদ বা সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করা হয়।
- জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) এর ভূমিকাশিক্ষামূলক প্রকাশনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা হলো জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) এর ভূমিকা। সরকার-নিয়ন্ত্রিত NCTB হলো একমাত্র সংস্থা যা স্কুল ও কলেজের (প্রথম থেকে দশম শ্রেণী) শিক্ষামূলক পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করার জন্য অনুমোদিত, এবং এই বইগুলো শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় 1। ১৯৮৩ সালের NCTB অধ্যাদেশ বেসরকারিভাবে পাঠ্যপুস্তক, অনুশীলন বই, গাইড বই এবং রেফারেন্স বই প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছিল, যা দেশের প্রকাশনা শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে 1। ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (IPA) এবং একাডেমিক অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ACPAB) একটি নতুন খসড়া শিক্ষা বিল পর্যবেক্ষণ করছে যা অনানুষ্ঠানিক অধ্যয়ন নির্দেশিকা প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারে 1। এটি প্রকাশকদের জন্য ইঙ্গিত দেয় যে K-10 পাঠ্যপুস্তকের বাজার বেসরকারি খাতের জন্য বন্ধ, তাই সাধারণ বাণিজ্যিক বাজার, উচ্চশিক্ষা বা বিশেষায়িত একাডেমিক প্রকাশনার দিকে মনোযোগ দেওয়া বেশি কার্যকর কৌশল হতে পারে।
VI. বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের সামগ্রিক পরিস্থিতি বোঝা, এর চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পাইরেসি (Piracy)পাইরেসি বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একটি প্রধান সমস্যা 1। অনুলিপি করা বই কম দামে বাজারে বিক্রি হয়, যা বৈধ প্রকাশকদের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে এবং কখনও কখনও মূল বইয়ের চেয়ে বেশি বিক্রি হয় 1। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা এখন স্থানীয় বেস্টসেলার বইগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করছে 22। পাইরেটেড কপিগুলো মূল বইয়ের মতো হুবহু তৈরি করা হয়, যা সাধারণ পাঠকের জন্য পার্থক্য করা কঠিন করে তোলে 22। অনলাইন বিক্রেতারা শনাক্ত এড়াতে ভার্চুয়াল নম্বর ব্যবহার করে, যখন রাস্তার বিক্রেতারা ফটোকপি করা বইকে আত্মবিশ্বাসের সাথে আসল বলে বাজারজাত করে 22। পাইরেসি প্রকাশক ও লেখকদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক হুমকি সৃষ্টি করে, যার ফলে রাজস্ব ক্ষতি, লেখকদের জন্য রয়্যালটি না পাওয়া, সম্পাদক, প্রুফরিডার এবং প্রেস কর্মীদের মজুরি ক্ষতি এবং সরকারের কর রাজস্বের ক্ষতি হয় 22। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ধীর এবং ব্যয়বহুল, যা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করে 22। অনেক পাঠক পাইরেসিকে চুরি হিসেবে দেখে না, যা এর স্বাভাবিকীকরণে অবদান রাখে 22। কপিরাইট বিল ২০২৩-এ পাইরেসির জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে 17। এই সমস্যা মোকাবেলায় প্রকাশক, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জাতীয় বই নীতি বাস্তবায়নের মধ্যে একটি জোট প্রয়োজন 22। একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থার জন্য, পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেবল আইনি সুরক্ষার উপর নির্ভর না করে ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্ট (DRM), প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ, মূল্য সংযোজিত পরিষেবা এবং শিল্প সমিতিগুলির সাথে সহযোগিতা সহ একটি বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করা উচিত।
- দক্ষ জনবলের অভাববাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো সুসংগঠিত ব্যবস্থা নেই 1। প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করার জন্য পেশাদার, শিক্ষাগত পটভূমি অপরিহার্য 1। শিল্পের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো দক্ষ জনবলের অভাব 3। বেশিরভাগ প্রকাশক “চতুর্থ শিল্প বিপ্লব” সম্পর্কে অসচেতন এবং তাদের প্রস্তুতিও সন্তোষজনক নয় 3। এটি আধুনিকীকরণ এবং বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থার জন্য, এই চ্যালেঞ্জটি একটি সুযোগ তৈরি করে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করে, অথবা আধুনিক ডিজিটাল ও প্রকাশনা দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ করে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে পারে।
- অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবদেশের সামগ্রিক আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রকাশনা শিল্পের স্থিতিশীলতা এবং মুনাফাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। একুশে বইমেলায় বিক্রিতে ব্যাপক হ্রাস “অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মেলা প্রাঙ্গণের কাছাকাছি ঘন ঘন বিক্ষোভ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং আয়োজকদের অব্যবস্থাপনার” কারণে ঘটেছে 23। অনেক বড় প্রকাশকের বিক্রি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে 23। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বইয়ের পাইকারি ক্রয় না হওয়াও বিক্রির হ্রাসের একটি কারণ 23। সরকারের প্রেস নিয়ন্ত্রণ এবং দমন 21 শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই খাতকে সমৃদ্ধ করতে “অনুকূল এবং সুসংহত আইনি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো” প্রয়োজন 1। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক মন্দা থেকে ঝুঁকি কমাতে, নতুন প্রকাশকদের উচিত ঐতিহ্যবাহী বই বিক্রির বাইরেও রাজস্ব প্রবাহকে বৈচিত্র্যময় করা। এতে ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন, অন্যান্য মিডিয়ার জন্য বিষয়বস্তু লাইসেন্সিং, প্রকাশনা পরিষেবা প্রদান বা আন্তর্জাতিক বাজারকে লক্ষ্য করা যেতে পারে।
- ই-বুক বাজারের বিকাশই-বুকের ব্যবহার বাংলাদেশে “সবেমাত্র শুরু হয়েছে, এবং ই-বুকের বাজার এখনও ছোট, যদিও দ্রুত বাড়ছে” 1। কিছু প্রকাশক (পাঞ্জেরী, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, পিবিএস) ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ই-বুক প্রকাশ করছে 1। ই-বুকের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য আরও বিপণন ও প্রচার প্রয়োজন 1। এই উদীয়মান বাজার নতুন প্রকাশকদের জন্য উদ্ভাবন এবং নতুন পাঠকগোষ্ঠীতে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। অনেক বিদ্যমান প্রকাশকের মধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব 3 ডিজিটালভাবে দক্ষ নতুন প্রবেশকারীদের জন্য একটি অ-ব্যবহৃত সম্ভাবনা নির্দেশ করে। একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থা শুরু থেকেই ডিজিটাল প্রকাশনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে পারে।
VII. সুপারিশ ও উপসংহার
বাংলাদেশে একটি বই প্রকাশনা সংস্থা স্থাপনের জন্য একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর গভীর জ্ঞান অপরিহার্য। এই প্রতিবেদনটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, সফলভাবে একটি প্রকাশনা সংস্থা স্থাপনের জন্য নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলি প্রদান করা যেতে পারে:
- কৌশলগত ব্যবসায়িক কাঠামো: সীমিত দায়বদ্ধতা, চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার এবং বর্ধিত বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নির্বাচন করা উচিত।
- পুঙ্খানুপুঙ্খ আইনি সম্মতি: নাম ছাড়পত্র, MoA/AoA খসড়া তৈরি এবং মূলধন জমা সহ RJSC নিবন্ধনের সকল ধাপ সতর্কতার সাথে অনুসরণ করা উচিত।
- সক্রিয় নিবন্ধন-পরবর্তী পদক্ষেপ: ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, ভ্যাট নিবন্ধন, ফায়ার লাইসেন্স এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সার্টিফিকেট দ্রুত সংগ্রহ করা উচিত এবং বিভিন্ন নিবন্ধনের মধ্যে নির্ভরশীলতা (যেমন টিআইএন ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স সম্ভব নয়) বোঝা উচিত।
- মেধা সম্পত্তি সুরক্ষা: কপিরাইট আইন ২০০০/২০২৩ এর অধীনে প্রকাশিত সকল কাজের জন্য কপিরাইট নিবন্ধনে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ডিজিটাল সুরক্ষার বর্ধিত আওতা এবং পাইরেসির জন্য কঠোর শাস্তির বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।
- আইএসবিএন ইন্টিগ্রেশন: সঠিক ক্যাটালগিং এবং বিতরণের জন্য সকল সংস্করণ ও ফরম্যাটের জন্য পদ্ধতিগতভাবে আইএসবিএন সংগ্রহ করা উচিত।
- বিষয়বস্তু যাচাই-বাছাই: সংবেদনশীল বিষয়বস্তু, বিশেষ করে বিদেশী কাজের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সেন্সরশিপ আইনের প্রভাব বোঝা উচিত।
- ডিজিটাল-প্রথম মানসিকতা: ক্রমবর্ধমান ই-বুক বাজারকে আলিঙ্গন করা এবং ডিজিটাল প্রকাশনা অবকাঠামো, বিপণন ও বিতরণে বিনিয়োগ করা উচিত।
- দক্ষতা উন্নয়ন: শিল্পের দক্ষতার ঘাটতি মোকাবেলায় আধুনিক প্রকাশনা প্রযুক্তি ও অনুশীলনে কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
- শিল্পের সাথে সম্পৃক্ততা: অ্যাডভোকেসি, নেটওয়ার্কিং এবং পাইরেসির বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপের জন্য ACPAB-এর মতো শিল্প সমিতিগুলিতে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
- আর্থিক পরিকল্পনা: সকল নিবন্ধন ফি, বার্ষিক সম্মতি খরচ এবং সম্ভাব্য মূলধন প্রয়োজনীয়তা (যেমন বিদেশী ওয়ার্ক পারমিটের জন্য) হিসাব করা উচিত।
বাংলাদেশের বহু-স্তরীয় নিয়ন্ত্রক কাঠামো, কর্পোরেট এবং মেধা সম্পত্তি আইনের জটিলতা এবং প্রকাশনা শিল্পের নির্দিষ্ট সূক্ষ্মতার পরিপ্রেক্ষিতে, পেশাদার আইনি ও হিসাবরক্ষণ সহায়তা গ্রহণ অত্যন্ত সুপারিশযোগ্য। আইনি পরামর্শদাতারা নিবন্ধন প্রক্রিয়াগুলি পরিচালনা করতে, প্রয়োজনীয় নথি তৈরি করতে, সম্মতি নিশ্চিত করতে এবং মেধা সম্পত্তি সুরক্ষা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কৌশলগত পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। এটি প্রকাশনা উদ্যোগের জন্য একটি মসৃণ সেটআপ এবং দীর্ঘমেয়াদী আইনি দৃঢ়তা নিশ্চিত করে।
সূত্র:
- IPA country report: Bangladesh – International Publishers Association, accessed June 15, 2025, https://internationalpublishers.org/ipa-country-report-bangladesh/
- The problems and prosperity of publishing industry of bangladesh | PDF – SlideShare, accessed June 15, 2025, https://www.slideshare.net/slideshow/the-problems-andprosperityof-publishingindustryofbangladesh/38497404
- Navigating the Fourth Industrial Revolution in the Publishing Industry of Bangladesh: Preparedness, Problems and Prospects | Social Science Review – Bangladesh Journals Online, accessed June 15, 2025, https://banglajol.info/index.php/SSR/article/view/80887
- Establishing a Sole Proprietorship in Bangladesh · Resource Portal, accessed June 15, 2025, https://resource.ogrlegal.com/formation/proprietorship/
- Business Structure Comparison Chart for Bangladesh • LegalSeba …, accessed June 15, 2025, https://legalseba.com/business-structure-comparison-chart-for-bangladesh/
- Process of Company Registration in Bangladesh 2025- Jural Acuity, accessed June 15, 2025, https://juralacuity.com/company-registration-in-bangladesh/
- New Guide of the Company Registration In Bangladesh (2025), accessed June 15, 2025, https://tnp.legal/blogs/company-registration-in-bangladesh/
- Guide for Registration/Set-up/Incorporation of Business in Bangladesh – Jural Acuity, accessed June 15, 2025, https://juralacuity.com/business-registration-in-bangladesh/
- RJSC Company Registration in Bangladesh | Requirements …, accessed June 15, 2025, https://lawadvisorbd.com/rjsc-company-registration-in-bangladesh/
- roc.chittagongdiv.gov.bd, accessed June 15, 2025, https://roc.chittagongdiv.gov.bd/en/site/page/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A8-%E0%A6%AB%E0%A6%BF
- Trade License (For Manufacturing Firms) – The Bangladesh Trade Portal, accessed June 15, 2025, https://bangladeshtradeportal.gov.bd/index.php?r=searchProcedure/view1&id=66
- How to Get a Trade License in Bangladesh 2024 : Guideline – ReCom Consulting Ltd., accessed June 15, 2025, https://recombd.com/how-to-get-trade-license-in-bangladesh-2024/
- Trade License Process and Cost in Bangladesh – Dewey Leboeuf, accessed June 15, 2025, https://deweyleboeuf.com/trade-license-process-and-cost-in-bangladesh/
- Obtain a Trade License, accessed June 15, 2025, https://www.bangladeshtradeportal.gov.bd/index.php?r=searchProcedure/view1&id=75
- Copyrights in Bangladesh Faqs – S.S. Rana & Co., accessed June 15, 2025, https://ssrana.in/global-ip/international-copyright/copyright-in-bangladesh/
- Copyright Law – IUB Library, accessed June 15, 2025, http://library.iub.edu.bd/content/copyright-law
- Bangladesh passed new Copyright Bill 2023 – AAA IPRIGHT …, accessed June 15, 2025, https://aaaipright.com/bangladesh-passed-new-copyright-bill-2023/
- FAQ (Frequently Ask Question) Q 1. What is an ISBN? Ans. An ISBN is an International Standard Book Number. Q 2. What is the purp – teletalk ISBN, accessed June 15, 2025, http://isbn.teletalk.com.bd/ui/frontend/faq.pdf
- The Publication of Books (Regulation and Control) Ordinance, 1965 (East Pakistan Ordinance) – Laws of Bangladesh, accessed June 15, 2025, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-details-343.html
- The Printing Presses and Publications (Declaration and Registration) Act, 1973, accessed June 15, 2025, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-437.html
- Censorship in Bangladesh – Wikipedia, accessed June 15, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Censorship_in_Bangladesh
- Piracy Threatens Local Book Publishing Industry in Bangladesh | Frontlist News, accessed June 15, 2025, https://www.frontlist.in/book-piracy-in-bangladesh
Sales of major publishers at book fair drop by half | Bonikbarta, accessed June 15, 2025, https://en.bonikbarta.com/business/KOB18gYurZzHR0Ee