Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

আদর্শ জীবনযাপন; হালাল উপার্জন

ইসলামে কর্মকে ইবাদাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে: ,‘নিশ্চয়ই মানুষ তাই পায়, যা সে করে। অতি শিগগিরই তার কর্ম মূল্যায়ন করা হবে। তারপর তাকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।’

আরও বলা হয়েছে, ‘আর হে নবী! তাদের বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাকো। আল্লাহ তাঁর রাসুল ও মোমিনদের কাজের ধারা কেমন,তা দেখবেন।

সুতরাং কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি রয়েছে তা হলো এমন কাজ করতে হবে যার মাধ্যমে অর্জিত আয় হবে পবিত্র ও হালাল। আর এই হালাল রুজির সন্ধান করাটাই ইবাদাতের সমতুল্য। যে তার পরিবার পরিজনের জন্য বা সাংসারিক খরচ মেটানোর জন্য হালাল পথে উপার্জন করে, তার সেই চেষ্টা শ্রম আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার মতোই পুণ্যময়। এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে পবিত্র ও হালাল রুজির সন্ধান করা একটু কঠিন হলেও মিষ্টি এবং উপাদেয়। তাই ধন সম্পদ অর্জন করলেই হবে না। সেগুলোকে পবিত্র ও হালাল হতে হবে। ইসলামের শিক্ষাটা সেরকমই। কুরআন এই পবিত্রতার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে।

সকল কাজেরই কিছু কিছু ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক দিক থাকে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য এই ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টাকে বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক একজন মালির কথা। সেই মালিই ভালো যে বীজ ভালোভাবে চেনার পাশাপাশি প্রয়োজনমতো সার কিংবা আলোর যথাযথ সংস্থান করবে। সেইসঙ্গে চারাগাছ কিংবা উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার পথে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো সম্পর্কেও জানবে এবং সেসব সমস্যা দেখা দিলে কীভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে-সে ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রাখবে।

তিনিই জাহাজের একজন ভালো ক্যাপ্টেন যিনি জাহাজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা অর্জন করা এবং জলপথ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা রাখার পাশাপাশি বিশাল বিশাল ঢেউ কিংবা জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে কী করতে হবে সে সম্পর্কেও যথেষ্ট যোগ্যতা রাখে।

একইভাবে পরিবারের মহান ও সৎ কর্তা তিনিই, যিনি সংসারের ব্যয় মেটাতে, রুটি রুজির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হারাম থেকে অত্যন্ত সন্তর্পনে হালালকে আলাদা করতে পারেন এবং পবিত্র রুজির সন্ধানেই থাকেন সবসময়। একজন মুসলমান শ্রমিক কিংবা কর্মকর্তা তিনিই যিনি বিচিত্র কোনঠাসা পরিস্থিতি ও ব্যাপক চাপের মুখেও সৎ পথ থেকে বিচ্যুত হন না,  সন্দেহজনক কিংবা দূষিত খাদ্যের আশ্রয় নেন না বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্যের সাথে তাঁর উপযোগী কাজের অপেক্ষায় থাকেন।

বিশ্বের বর্তমান অর্থব্যবস্থায় মানুষ নিজের কাজ নির্বাচন করা এবং অর্থ উপার্জন করার মাধ্যমগুলো নির্বাচন করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। একজন ব্যক্তি ইচ্ছে করলে বৈধ-অবৈধ উপায়ে, ঘুষ খেয়ে, সুদ নিয়ে, জুয়া খেলে, সম্পদের অবৈধ মজুদ গড়ে তুলে ইত্যাদি বিচিত্র উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে পারেন। অপরের অধিকারের বিষয়টিকে কোনোরকম মূল্যায়ন না করে কিংবা কোনোরকম নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা পরকালীন জীবনের ওপর তার কীরকম প্রভাব পড়বে সেসব চিন্তা না করেই সম্পদ অর্জন করার ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থায় মানুষ পুরোপুরি মুক্ত ও স্বাধীন। নি:সন্দেহে এরকমভাবে অর্থ উপার্জন করলে মুদ্রাস্ফীতি, নয়া দাসপ্রথা সৃষ্টি সহ আরও বহু ধরনের নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিতে পারে। এরকম একটি সমাজে জীবনযাপন করা সত্যিই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। এরকম সমাজে সত্যিকারের মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়, মানবীয় মূল্যবোধগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

পক্ষান্তরে ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সবকিছুর আগে যে বিষয়টি গুরুত্ব পায় এবং পবিত্র কুরআনের শিক্ষায় যে বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে তা হলো হালাল উপার্জন। কাজ এবং উপার্জন দুটোই হালাল হতে হবে। এর মানে হলো অর্থ উপার্জন করার ক্ষেত্রে, রুটি রুজির ক্ষেত্রে, পোশাক আশাকসহ জীবন যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় করার জন্য উপার্জন নিশ্চিত করতে হবে এমনভাবে যেন অন্যের অধিকার নষ্ট না হয় এবং শরীয়তের দিক থেকে অবৈধ না হয়।

পবিত্র কুরআন সবসময় মানুষের কাছে প্রত্যাশা করে নিজের ও পরিবারের শান্তি আর কল্যাণের স্বার্থে আল্লাহর নিয়ামত থেকে উপকৃত হতে এবং সেইসঙ্গে কর্ম তৎপরতার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য ও সম্পদহীনতা দূর করতে। পবিত্র কুরআন বিভিন্ন আঙ্গিকে ইসলামের অনুসারীদের তাকিদ দিয়েছে তারা যেন শুধুমাত্র বৈধ, পবিত্র ও হালাল পন্থায় রুটি রুজি বা আয়-উপার্জন করে। হালাল বলতে বোঝায় শরীয়ত যাকে নিষিদ্ধ করে নি আর পবিত্র বলতে বোঝায় সেইসব বস্তু যেসব মানুষের সুস্থতার জন্য উপযোগী। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘হে মানব জাতি ! পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেসব থেকে হালাল ও পাক জিনিসগুলো খাও এবং শয়তানের প্ররোচনার অনুসরণ করো না যে কিনা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’।

প্রকৃতপক্ষে কষ্টার্জিত হালাল রুজি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি এতে তার মন-মানসিকতা ও চরিত্রও হয় উন্নত। সে হয় কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল। হালাল রুজির অধিকারী ব্যক্তির  হৃদয় হয় উদার এবং তার বাহ্যিক আচার-আচরণও হয় মার্জিত ও প্রশংসিত। হালাল উপার্জনকারী অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী যেমন হয় তেমনি হয় পরোপকারীও। পক্ষান্তরে যে অবৈধ উপায়ে রুজি করে তার স্বাস্থ্য,মন-মানসিকতা ও চরিত্র সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে সুস্থ দেহ ও প্রশান্ত মনের অধিকারী হবার তৌফিক দান করুন-এই প্রত্যাশায় পরিসমাপ্তি টানছি আজকের আসরের। #

সৌজন্যে ঃ রেডিও তেহরান অনলাইন

শেয়ার করুন
Exit mobile version