Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস

আজ ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে প্রথমবারের মতো পালিত হয় দিবসটি। বর্তমানে আশিটিরও বেশি দেশে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে পালিত হয়। এবারের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রাপ্তবয়স্ক ও বালকদের মধ্যে তফাত সৃষ্টি’।

এই দিবসের উদ্দেশের মধ্যে রয়েছে- পুরুষ ও বালকদের স্বাস্থ্য, লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন, লৈঙ্গিক সমতার প্রচার এবং পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা। পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। গুরুত্বের সঙ্গে তাদের অর্জন ও অবদানকে উদ্‌যাপন করা হয়। বিশেষ করে সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে তাদের অবদানকে তুলে ধরা।

১৯৬০ এর দশকে নারী দিবসের সঙ্গে সমতা আনতে ২৩ ফেব্রুয়ারিকে পুরুষ দিবস করার উদ্যোগ নিলেও দিনটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে’। পরে এর নামে দেওয়া হয় ‘ডিফেন্ডার অব দি ফাদার ল্যান্ড ডে’।

১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরী-ক্যানসাস সিটির মিসৌরী সেন্টার ফর মেন’স স্টাডিজের প্রফেসর থমাস ওস্টারের উদ্যোগে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় ফেব্রুয়ারি মাসে পুরুষদের উপলক্ষ করে কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে নানা কারণে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন তারা। এর মধ্যে মাল্টায় ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অন্যান্য দেশেও একটি পালিত হয়। মাল্টা এই ধারণা নেয় ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো থেকে।

ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে দিবসটির উদ্যোগ নেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড. জেরোমি তিলকসিংহ। তিনি বলেন, “আমি অনুভব করেছি পুরুষদের জন্য কোনো দিবস নেই। কেউ কেউ বলে বাবা দিবস তো রয়েছে। কিন্তু এতে বালক, তরুণ ও যারা বাবা নন তাদের কী হবে?”

তিলকসিংহের নিজের জীবনের আদর্শ ছিলেন তার বাবা। ১৯ নভেম্বর তার বাবার জন্মদিনও বটে। এ ছাড়া স্থানীয় একটি খেলার দল লিঙ্গ, ধর্ম ও জাতিগত বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এদিন। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের দাপ্তরিক সমর্থন পায়।

এই দিবসের বিষয় ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে-

১. বিভিন্ন ক্ষেত্রের ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের প্রচারণা।
২. সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশুর যত্ন ও পরিবেশে পুরুষদের অবদানকে উদ্‌যাপন।
৩. পুরুষের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক, আবেগীয়, শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে ওঠায় জোর দেওয়া।
৪. সামাজিক সেবা, আচরণ ও প্রত্যাশা এবং আইনের ক্ষেত্রে পুরুষদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের বৈষম্যকে সবার সমানে তুলে ধরা।
৫. লৈঙ্গিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও সমতা।
৬. মানুষের জন্য নিরাপদ ও উত্তম পৃথিবী গড়া, যেখানে সে নিরাপদে ও তার সকল সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।

এই দিনের উল্লেখযোগ্য আয়োজনে থাকে সেমিনার, স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বিশেষ কার্যক্রম, রেডিও ও টিভি অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও মার্চ, বিতর্ক প্রভৃতি। প্রতি বছরে আলাদা আলাদা বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন- ২০০২ সালে শান্তি, ২০০৩ সালে পুরুষদের স্বাস্থ্য বা ২০০৯ সালে ইতিবাচক অনুকরণীয় আদর্শ। প্রতিটি দেশ নিজের স্থানীয় চাহিদার নিরিখে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করতে পারে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১৯ নভেম্বরকে পুরুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচারে গুরুত্ব দেখা হচ্ছে। যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিকস ও এইডস নিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এই দিবসকে কেন্দ্র করে। এই দিবসে অনেকে পারিবারিক নির্যাতনের নিয়ে সরব হন।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসকে কেন্দ্র করে মভেম্বর নামের একটি দলও গড়ে উঠেছে। যেখানে গোঁফ হলো পুরুষের প্রতীক। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এই দলটি গোঁফ বড় রাখার ইভেন্ট পরিচালনা করে। এই সময় তারা ফান্ড সংগ্রহ করে। পুরুষের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালায়। ২০১২ সালে গ্লোবাল জার্নাল জানায়, এটি পৃথিবীর শীর্ষ ১০০টি এনজিও’র একটি।

শেয়ার করুন
Exit mobile version