Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

হরিণ ও তার কস্তুরি ঘ্রাণের মিস্টিক গল্প

সব হরিণ না, বিশেষ এক জাতের পুরুষ হরিণ, যার উপরের দুই পাশের দাঁত মুখের বাইরে নিচের দিকে নেমে আসে। এই হরিণ প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে তার নাভি অঞ্চলে (between its rectal and naval area) কস্তুরি ঘ্রাণ জমতে থাকে। ধীরে ধীরে স্তুপ হতে হতে এক দলা পিণ্ড হয়। দেখতে ছোট নারকেল শেইপের মতো লোমে ঢাকা।

কস্তুরী-হরিণ। ছবি: sundayscents.com

কস্তুরি জমা হতে থাকে যখন, ঘ্রাণ ছড়ায় বাতাসে। খুব মনোহর বিশুদ্ধ ঘোর লাগানোর ঘ্রাণ। এটি বিশ্বে সবচেয়ে দামী ঘ্রাণ এসেন্স গণ্য। মোস্ট এ্যাক্সপেনসিভ এ্যানিম্যাল আফ্রোডিজাইক হিসাবেও কদর আছে।

যখন কস্তুরি ফুটতে থাকে, হরিণের নাকে লাগে ঘ্রাণ। সে উতলা হয়, ভালবাসাবোধের রওশন আসে তার মনে। সে ব্যাকুল হয়ে এদিক ওদিক ছোটে। বহুদূর থেকে এই ঘ্রাণ আসছে মনে করে ধুম দিওয়ানার মতো দৌড়ে। সে খোঁজে ঘ্রাণের উৎস। ভাবে অন্যের কাছ থেকে আসছে এই ঘ্রাণ। সেই অন্যকে তার দরকার। সে এই ঘ্রাণের প্রেমে পড়ে দিশাহারা।

কস্তুরীর প্রাথমিক রুপ। ছবি: উইকিপিডিয়া

সে জানে না এই সত্য তারই ভিতরে — তারই খুশবু — তারই অস্তিত্বের সৌন্দর্যের সারাৎসার —তারই সৌলমেইট। বেচইন বেকারার সে এক পর্যায়ে পাহাড়ের ধারালো টেকে ঘষে ঘষে খসায় কস্তুরি আর চৌদিকে ব্যাকুল নজর রাখে কোন্ সোর্স থেকে আসছে এই পাগল করা ঘ্রাণ।

একবার খসালে পিণ্ডটি বছর ঘুরে আসতে আবার জমা হয়, আবার সে বেখবর ঘষে ঘষে হারায় অথবা তার এই দেওয়ানাপন অবস্থার সুযোগ নিয়ে শিকারি মানুষ বধ করে হরিণকে কেটে নেয় কস্তুরি ভাণ্ডটি। হরিণ বুঝে না তার অমূল্য সারাৎসার খোয়া গেল।

এক কেজি পরিমাণ কস্তুরির জন্যে প্রায় দুই হাজার এই জাতের হরিণ মেরে ফেলতে হয়।

এর মিস্টিক তাৎপর্য এই যে, মানুষের ভিতরেই আছে তার মনের মানুষ — তার বিউটিফুল সেল্ফ। সে বেখবর থাকায় আত্মসৌন্দর্যের নাগাল পায় না, খোঁজে অন্যের কাছে।

আবার অন্যভাবে, সে টের পায় না, বুঝতে পারে না বলেই এই ঘ্রাণ তাকে ইন্সপায়ার করতে থাকে অধরা থেকেই। আর সুবোধ ও প্রেমচেতনায় মশগুল থাকতে থাকতে তার পার হয় এ দুনিয়া ভ্রমণের সময়। হরিণের চোখ আর শরীরের সৌন্দর্যের বিশেষ স্তুতি ত আছেই শিল্পে সাহিত্যে।

শেয়ার করুন
Exit mobile version