টবলে একটা কথা আছে, ‘আক্রমণভাগ আপনাকে জেতাতে পারে। কিন্তু শিরোপা জেতাবে রক্ষণভাগ।’ কথাটি এমনি এমনি আসেনি। আর শিরোপা জেতানোর মতো রক্ষণভাগ ফ্রান্স দলের আছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে বিশ্বকাপে প্রতিটা দলের রক্ষণভাগই অনেক বড় বড় ভুল করেছে। খেলার অংশ হিসেবে ফ্রান্সও করেছে। কিন্তু তাদের ভুলের মাত্রাটা খুবই কম। উমতিতি, ভারানে, হার্নান্দেজ ও পাভারকে নিয়ে ফরাসিদের জমাট রক্ষণভাগ। ফাইনালে আসার আগ পর্যন্ত ছয় ম্যাচে গোল হজম করেছে মাত্র চারটি। চারটি ম্যাচেই ক্লিন শিট।
দুর্দান্ত প্রতি আক্রমণ
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটা মনে করে দেখুন, কত দ্রুতগতিতে প্রতি-আক্রমণে ওটামেন্দি-রোহোদের তছনছ করে ফেলেছিল ফ্রান্স। রাশিয়া বিশ্বকাপে যে বেলজিয়াম ছিল সবচেয়ে নিখুঁত, তাদের বিরুদ্ধেও ফরাসিরা দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণ করেছে। আসলে প্রতি আক্রমণটা ফ্রান্স দলের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাকটিকসের অংশ। যাদের ফরোয়ার্ড লাইনে কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো অতি দ্রুতগতির ফুটবলার আছেন, সে দলের প্রতি-আক্রমণ ভালো হবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া দুই তরুণ ফুলব্যাক পাভার ও হার্নান্দেজ যেভাবে ঝড়ের গতিতে ওপরে ওঠে যায়, সেটা প্রতি-আক্রমণে বাড়তি রসদ জোগায়।
প্রয়োজন অনুযায়ী ফরমেশনে ভিন্নতা
যে দল মাঠে প্রতিপক্ষের খেলার ধরন বিচার করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেদের বদলে ফেলতে পারে, সে দলটা ততটাই ভালো। ফ্রান্স কখনোই একটা প্ল্যান নিয়ে মাঠে নামে না। ৪-২-৩-১ নিয়ে শুরু করলেও ৪-৪-২ করে ফেলছে অনায়াসে। যেকোনো দলই ফরমেশনে বদল আনতে পারে। কিন্তু সেটা প্রতিপক্ষের ওপর প্রমাণ করাটাই আসল কাজ। যেটা গ্রিজমান, পগবারা খুব ভালো পারেন।
দলীয় ডিফেন্ডিং ভালো
বল পায়ে না থাকলে খুব তাড়াতাড়ি প্রতিপক্ষের সামনে তিনটা ডিফেন্ডিং ব্লক তৈরি করে ফেলে ফ্রান্স। সেটা অ্যাটাকিং থার্ডে কখনো শুরু হয় গ্রিজমানকে দিয়ে, আবার কখনো এমবাপ্পে বা মাতুইদিকে দিয়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হলো নিজেদের অর্ধে বল প্রবেশ করলেই পুরো দলটাই হয়ে ওঠে রক্ষণভাগ। চারজনের রক্ষণভাগের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে পাঁচজন। ফলে প্রতিপক্ষরা তেমন ফাঁকফোকর পায় না।
পাঁচ নম্বর কারণটি সবার শেষে বললেও এটাই আজকের ফাইনালের সবচেয়ে বড় শক্তি। দেশমের খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে। তা-ও আবার সে ছিল দলের অধিনায়ক। ফাইনালে কীভাবে খেলোয়াড়দের তাতিয়ে দিতে হয়, তা দেশমের চেয়ে ভালো কারও জানার কথা নয়। এ ছাড়া ছয় বছর ধরে ফ্রান্স দলের সঙ্গে আছেন দেশম। ফলে সব খেলোয়াড় সম্পর্কেই তাঁর ভালো জানা। যা ক্রোয়েশিয়ান কোচ দালিচের নেই। তাঁর অধীনে বিশ্বকাপে দারুণ খেলছে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু আজকের ম্যাচটি ফাইনাল। এর চাপ অন্য রকম। যা দেশমের আছে, দালিচের নেই।