ভদ্র ভাষার পরামর্শ গ্রহণের মানসিকতা ক্ষমতাসীন দলের নেই: সৈয়দ ইবরাহিম

রেডিও তেহরান থেকে নেয়া প্রতিবেদন ।। ‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্বাধীন এবং দৃঢ়চেতা নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন সবার শান্তিপূর্ণ প্রচার ও মতপ্রকাশ এবং ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা।’ গতকাল (মঙ্গলবার) ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনায় এ অভিমত প্রকাশ করে বলেন, দেশটির উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাংলাদেশবিষয়ক গ্রুপের প্রধান মিস জ্যাঁ ল্যামবার্ট সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টিকারী সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে তিনি দলীয় যুবগোষ্ঠীগুলোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। মিস ল্যামবার্ট বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম রেডিও তেহরানকে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বা গণতন্ত্র নিয়ে এ রকম ভদ্র ভাষার পরামর্শ গ্রহণ করার মতো মানসিকতা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেই। তাই বর্তমান সরকারক গণতান্ত্রিক আচরণে বাধ্য করার মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের।

আজ ঢাকায় প্রাকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির পররাষ্ট্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মুখপাত্র চার্লস ট্যানকের উদ্যোগে ব্রাসেলসে আয়োজিত সভায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি বড় প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এর নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি কমিটি কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের পক্ষে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ সবারই থাকবে। তবে তিনি বলেন, যদি কোনো দল নির্বাচনে না আসে তাহলে এর কারণ হচ্ছে তারা তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথা বুঝতে পেরেই আসবে না। এ আলোচনায় বিএনপি আমন্ত্রিত হলেও উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে অতীতে আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সভায় অংশগ্রহণ না করার কথা তারা আগেই জানিয়ে দেয়।

সভায় দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সিগফ্রেড উলফ বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থা বিস্তারের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হলেও আগামী নির্বাচনে তারা প্রভাব ফেলবে। তিনি মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে বলে দাবি করেন।

একই সঙ্গে সিগফ্রেড উলফ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং কারাগারগুলো জঙ্গিদের মতবাদ বিস্তারের লক্ষ্য হয়ে উঠছে। তবে এমইপি মিস ল্যামবার্ট বলেন, সন্ত্রাসবাদ প্রসারের কাজ যে শুধু একটি দল করছে তা নয়, অনেক গোষ্ঠীই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপকে লক্ষ্য করে জিহাদিরা কাজ করছে। চার্লস ট্যানক বলেন, বিএনপি যদি জামায়াতকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে, তবে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক।

সভায় ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের (এমইপি) মধ্যে সাইয়েদ কামাল, ব্যারনেস মোবারক, সাজ্জাদ করিম, আমজাদ বশির বক্তব্য দেন।

সাইয়েদ কামাল আইএসের মতো ইসলামি জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর হুমকি মোকাবিলার জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। বাণিজ্য বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের সদস্য সাজ্জাদ করিম ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের অধিকার ও মজুরিবিষয়ক সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। ব্যারনেস মোবারক নারীর ক্ষমতায়নে আরও উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন। আমজাদ বশির রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবির দেখে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের এই অবস্থা কোনোভাবেই স্থায়ী হতে দেওয়া যায় না।

সভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ক্যাম্পেইন ফর দ্য রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশের অজিত সাহা এবং সেক্যুলার মুভমেন্ট অব বাংলাদেশের পুষ্পিতা গুপ্ত সংখ্যালঘু, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন সহিংসতা ও বৈষম্যের কথা তুলে বলেন। তাঁরা দুজনেই বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন হলেই হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। তার আর বিচার হয় না। তাই আগামী নির্বাচন নিয়েও তাঁরা উদ্বিগ্ন বলে জানান। অজিত সাহা গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন হামলার ঘটনার ছবি ও তথ্য তুলে ধরে বলেন, সরকার এসব ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। #

শেয়ার করুন