বাংলাদেশে উৎপাদিত সাধারণ চা এবং সবুজ চা বা গ্রীন-টি ব্যাগে ক্ষতিকর এপিক্লোরোহাইড্রিন পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি পরিচালিত একটি ল্যাব টেস্টে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া পরীক্ষিত আরো একটি ব্র্যান্ডের সাধারণ চায়েও এই ক্ষতিকর রাসায়ানিকটির উপস্থিতি মেলেনি। এই রাসায়ানিকটিকে ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধির জন্যে দায়ী করা হয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মোঃ মাহবুব কবীর (যুগ্ম সচিব)-এর এক ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, দেশের নামকরা সব কোম্পানির চা পাতা খোলা অবস্থায় পরীক্ষা করে সেগুলোতেও কীটনাশকের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। যে কারণে দেশীয় কোম্পানির চা নিরাপদ বলেই ধরে নেওয়া যায়।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। এর চা শিল্প ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চলে আসছে, যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে চা ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে, বাংলাদেশে ১৬২টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান। এখানকার এই শিল্প বিশ্বের ৩% চা উৎপাদন করে থাকে, এবং ৪০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
এখানকার উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহে চা উৎপাদন হয়ে থাকে; উচ্চভূমি, উষ্ণ জলবায়ু, আদ্র এবং অতি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকাসমূহ উন্নতমানের চা উৎপাদনের মোক্ষম পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়।
পাটের পরেই চা হচ্ছে বাংলাদেশের সবথেকে বেশি রপ্তানি হওয়া অর্থকারী ফসল। এই শিল্প থেকে জাতীয় জিডিপির ১% আসে। চা উৎপাদনকারী জেলাগুলো হচ্ছে- মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং রাঙ্গামাটি।
এক সময়কার বিশ্বের প্রধান একটি চা রপ্তানিকারক দেশ, বাংলাদেশ এখন মাত্র সাধারণ এক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশি মধ্যম শ্রেণীর উত্থান এই শিল্পকে লাভজনক দেশীয় বাজারের দিকে আলোকপাত করে ব্যাপকভাবে চালিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে এই সেক্টরটি ম ম ইস্পাহানি লিমিটেড, কাজী এন্ড কাজী, ট্রান্সকম গ্রুপ, জেমস ফিনলে বাংলাদেশ, ওরিয়ন গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ এবং ডাঙ্কান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
২০১২ সালে, বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন করে, যা প্রায় ৬,৩৮৫ কোটি কিলোগ্রাম ছিল। ১৯৪৭ সালে যেখানে ২৮,৭৩৪ হেক্টর ভূমি ছিল, সেখানে বর্তমানে ৫৬,৮৪৬ হেক্টরেরও বেশি ভূমি এই শিল্পের চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে সরকার ক্ষুদ্র পরিসরের চা উৎপাদকদের এই শিল্পের বিকাশে কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছে, বিশেষকরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
বাংলাদেশে চায়ের মূল্য চট্টগ্রামে হওয়া সরকারি নিলামের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। মার্চ ২০১৫-তে, বাংলাদেশের চায়ের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ছিল মার্কিন ডলার।