কালের পথ পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ী জনপদের ঐতিহ্যবাহী হুক্কা। এক সময় সাধারণ মানুষের কাছে ধুমপানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় ছিল এই হুক্কা। যার প্রচলন এখন দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর আগেও পাহাড়ী এ জনপদেও ধুমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যামে তামাক পানের নেশায় অভ্যস্ত ছিল। সে সময় ধনী-গরীব প্রায় সকলের বাডিতেই হুক্কার প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রবীন বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের বিভিন্ন বৈঠক খানায় মেহমানদের জন্য প্রধান আকর্ষন ছিল হুক্কা। যে কোনো বয়সের ছেলে ও বয়স্করা হুক্কার নেশায় মাতোয়ারা ছিল। বর্তমান প্রজন্মে হুক্কা খাওয়াতো দুরের কথা অনেকে চোখেই দেখেনি। কারন এসময়ে হুক্কার জায়গা দখল করে নিয়েছে বিড়ি, সিগারেট, হুইস্কি, হেরোইন, গাজাঁসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। যার মধ্যে ক্ষতিকর নিকটিন রয়েছে অধিক হারে। তার পরও এই মরন নেশায় জড়িয়ে পড়েছে উঠতি বয়সের যুব সমাজ। যাদের নিয়ে দেশের সকল অবিভাবক মহল থাকেন সব সময় উদ্বিগ্ন।
সরেজমিনে খাগড়াছড়ি জেলার হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, তামাকের পাতাকে টুকরা টুকরা করে কেটে চিতাগুড় মিশ্রিত করে তৈরী করা হচ্ছে হুক্কার প্রধান উপাদান তামুক। পাহাড়ী অঞ্চল ছাড়া এখন তা তেমন একটা চোখে পড়েনা।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা বাজারে দেখাযায়, প্রতি মঙ্গলবার (হাটের দিন) শত শত পাহাড়ি নারী-পুরুষ হুক্কা টানছে এবং এর উপাদান তামুক কিনছে দেদারছে। প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীতে সিগারেট তেমন একটা পাওয়া যায়না তাই সপ্তাহে একদিন হুক্কার উপাদান তামাকের গুড়া কিনে নিয়ে যায় পাহাড়িরা।
গুইমারা বাজারে বিটন বড়ুয়ার দোকানে হুক্কা টানার (ধুমপান) সময় কথা হয় কালাচান ত্রিপুরার সাথে। তিনি জানান, হুক্কা টানতে যে মজা পাওয়া যায় সিগারেটে তা পাওয়া যায়না। এক সময় এই হুক্কা টানতো পাহাড়ি রাজারা বাদশারা। তাই হুক্কা টানলে নিজেকে মাঝে মাঝে রাজা মনে হয়। একারণে এখনও তিনি হুক্কা টানেন।
স্থানীয় বাজারের তামাক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আগে প্রতি মঙ্গলবার (হাটের দিন) প্রায় অর্ধলাখ টাকার তামাক বিক্রি হতো, এখন আগের মত তেমন বেচা-বিক্রি হয় না। মানুষ ঐতিহ্যবাহী হুক্কা ছেড়ে সিগারেট ধরেছে। সিগারেট কোম্পানীগুলোর রমরমা ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি আমাদের ব্যাবসায়ও ধ্বস নেমেছে।