Khola Chokh | Bangla News, Entertainment & Education

পাহাড় হোক ‘শিক্ষার তীর্থস্থান’

বান্দরবানের দূর্গমাঞ্চলে একদল স্কুলগামী শিশু। ফটো: মং মং সিং

নভেম্বর-ডিসম্বের মাস এলেই বান্দরবানের দূর-দূরান্ত থেকে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে ভর্তির জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোষ্টেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে দেখা যায়। অবশ্য বেশিরভাগ অভিভাবক নিরাশ মনে বাড়িতে ফিরে যান। কারণ হলো চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা খুব কম। তবে, দূর-দূরান্তে বসবাসকারী নিরক্ষর এসব অভিভাবকদের শিক্ষার প্রতি এই আগ্রহ আমাদেরকে আশান্বিত করে। শিক্ষার প্রতি তাদের এই আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বলা যায় এটি একটি ‘বিপ্লব’। আর এ ‘বিপ্লব’ ঘটাতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছে। সরকারি, বেসরকারি, এনজিও, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সংগঠকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম এই আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

শূন্যদের জন্য ‘শিক্ষা’
‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’- এটি আমাদের সবারই জানার কথা। আর এই কথায় আবারও জোরালোভাবে আলোকপাত করেছেন ড. মঞ্জুরে খোদা, শিক্ষা উন্নয়ন গবেষক। গত ৬ জানুয়ারি ডেইলি ষ্টার পত্রিকায় শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণার ফলাফল, বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ইত্যাদি নিয়ে গভীরভাবে আলোকপাত করেছেন। প্রাকৃতিক সম্পদের বদলে ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’ কে অগ্রাধিকার দিয়ে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ উন্নতি সাধন করেছে। জাপান তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ড. মঞ্জুরে খোদা ‘গবেষণামূলক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা’কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীন তার শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন ঘটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপান, আমেরিকাকে পিছনে ফেলেছে। অর্থাৎ কোনো কোনো ব্যক্তি, দেশ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছে।

‘শিলং’ শিক্ষার তীর্থস্থান
বিশাল ভারতে ‘শিলং’ খুব ছোট্ট একটি শহর। মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। পাহাড়ি এই শহরটি দেখতে অনেকটা বান্দরবানের থানচির মতো। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে এই ছোট্ট শহরটি ভারতের ‘শিক্ষার তীর্থস্থান’ হিসেবে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে, বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পড়তে আসে। বিশেষ করে, ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে অতুলনীয়। খরচও খুব কম। বান্দরবান সদরে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে যে খরচ শিলং-এও সে পরিমাণ খরচ হয়। এর চাইতে বেশি নয়।

পাহাড় হোক ‘শিক্ষার তীর্থস্থান’
আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে সমতল ভূমি খুব কম। নেই বললেই চলে। এখানে পাহাড়ের পর পাহাড়। যা সমতল ভূমি ছিল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গিলে ফেলেছে আগেই। তাই আমার মতে, শিক্ষাই এখানে মানবসম্পদ উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি। ড. খোদার মতে, ‘‘মানবসম্পদ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা ও গবেষণা। শিক্ষা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া’’

সেক্ষেত্রে আমরা শিলং এর শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে কারিগরি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শিক্ষাকে সংযুক্ত করতে পারি। অর্থাৎ ‘ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, কারিগরি, প্রযুক্তি শিক্ষা’র সমন্বয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু যায় কিনা? অন্ততঃ কয়েকটি জায়গায়। অন্ধকার জনপদে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হতে ২০ বছর সময় লেগেছে। শিক্ষার তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হয়তো আরো কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। লাগুক সময়। যদি কেউ কোনো প্রতিষ্ঠান শুরু করে তাতে ক্ষতি কী? ভারতের ছোট্ট শহর শিলং কিন্তু আমাদেরকে অনুপ্রেরণা ও সাহস দিচ্ছে। লেখা সমাপ্ত করার আগে আমি পুনরায় একটি লাইন লিখে সমাপ্ত করছি, ‘‘শিক্ষা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া’’।

লেখক: মং মং সিং, উন্নয়নকর্মী।

শেয়ার করুন
Exit mobile version