পাথর শেষ, এখন নুড়িও যাচ্ছে!

পাথর তোলা শেষ। বেশিরভাগ নদী-খাল-ঝর্নায় এখন আর কোনো পাথর দেখা যাচ্ছেনা। এবার পাথরখেকোদের চোখ পড়েছে খাল-ঝর্নার তীর ও তলায় পড়ে থাকা নুড়ির দিকে। বান্দরবানের লামা উপজেলায় অবৈধভাবে পাথর তুলে এমনই করুন দশা করেছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ডলুঝিরিতে (দুখিয়া পাহাড়ের পাদদেশে) বসবাসরত লোকজন জানিয়েছেন, কয়েকবছর যাবৎ পাথরখেকোরা ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঝিরির সব পাথর নিয়ে গেছে। বর্তমানে ঝিরিতে কোন পাথর নেই। এখন তারা নুড়ি কণাগুলো পর্যন্ত কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিষেধ করলে তারা শুনেনা। ঝিরি দু’পাশের বিস্তীর্ন এলাকা ও চাষের জমি ভেঙ্গে গেছে। উদ্বেগের বিষয় হল, এইসব মাটি জাতীয় নুড়িপাথর গুলো ব্রিজ ও বহুতল সরকারি ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহার করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মাঝে মধ্যে প্রশাসনের সাময়িক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা গেলেও স্থায়ীভাবে পাথর বন্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। অবাধে পাথর সহ নুড়ি কনা নিয়ে যাওয়ার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। যারা পাথর নিয়ে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।

লামা উপজেলায় রাতের আধাঁরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পাচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে মজুদ করা হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষাধিক ঘনফুট অবৈধ পাথর। পাহাড়-খাল-নদী-ছড়া খুঁড়ে উত্তোলনকৃত এইসব অবৈধ পাথর থেকে কোন রাজস্ব পায়নি সরকার।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের বনপুর, ইয়াংছা, ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরা ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি, কাঁঠালছড়া, বদুর ঝিরি, গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রিকফিল্ড, মিনঝিরি, ফাইতং রাস্তার মাথা, আকিরাম পাড়া, নাজিরাম পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের মিজঝিরি অংশ, লম্বাশিয়া, মেহুন্ধা খাল, শিবাতলী পাড়া এবং সরই ইউনিয়নের লুলাইং, লেমুপালং এ কয়েক হাজার স্তুপে ৩ লক্ষাধিক ঘনফুট অবৈধ পাথর জমা করা হয়েছে। যা থেকে প্রতিরাতে চুরি করে পাচারও হচ্ছে। পাথর উত্তোলন, পাচার করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা পানির উৎস নদী, খাল, ছড়া গুলো ধ্বংস করছে অপরদিকে ভারী ট্রাকে করে পরিবহণ করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাটগুলো ভেঙ্গে নষ্ট করছে। এতে ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

এইসব অবৈধ পাথরের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, বর্তমানে পাথরের কোন পারমিট দেয়া হয়নি। মজুদকৃত পাথরের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছরে লামা উপজেলায় কোন পাথরের পারমিট দেয়া হয়নি। অবৈধ পাথর ব্যবসায়ী ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

– লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

শেয়ার করুন