ডিজিটাল আইনের আটটি ধারায় সংশোধনী চেয়েছেন সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক নেতা, গণমাধ্যমের মালিক ও প্রতিনিধিরা। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়ে সম্পাদক পরিষদ ও বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ আইনের ধারা ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ নিয়ে কমিটিতে গণমাধ্যমের অবস্থান তুলে ধরেন। কমিটি বিলটিকে আরো যুগপোযোগী করতে আলোচ্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে আরো বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সংসদ ভবনে আজ অনুষ্ঠিত ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৪ তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে বৈঠক মূলতবী করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ। বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সরওয়ার এবং দি ডেইলি ষ্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স এর প্রেসিডেন্ট সালমান এফ রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বাবু, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক।
পাশাপাশি কমিটির সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান (রিমন), কাজী ফিরোজ রশীদ, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, সাংবাদিকতা ব্যহত করা আমাদের উদ্দেশ্য না। সাংবাদিকদের টার্গেট করে কোনো আইন করাও আমাদের উদ্দেশ্য না। সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা বলা আছে। সংবিধানের উল্লেখ্যযোগ্য দিক প্রেসের স্বাধীনতার কথাও বলা আছে। তাই সংবিধানের বিপরীতে বা সাংঘর্ষিক কোনো আইন আমরা করতেই পারি না।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা ডিজিটাল আইন নিয়ে আমাদের ‘কনসার্ন’ ব্যক্ত করেছি। আমরা বলেছি, আইনে যে সমস্ত ধারায় সাংবাদিকতার অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে বাধা আছে, অবশ্যই সেসব দূর করতে। নতুবা আমরা সাংবাদিকরা বাধাগ্রস্ত হব। মন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। এই আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগে আরেকবার আমাদের সাথে বসবেন বলে আমাদের আশ্বস্থ করেছেন।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, এই ডিজিটাল আইন নিয়ে আমরা যে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তাই আইনের যে সমস্ত ধারাতে বিন্দুমাত্র স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিরোধক বিষয় লক্ষ্য করেছি সেসব ধারাই আমরা তুলে ধরেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি, সাংবাদিকদের দুশ্চিন্তার ব্যাপারে উনারা খুবই সহানুভূতিশীল। আমরা আশা করছি আইনের কতগুলো ধারায় আমূল পরিবর্তন আসবে। আইনমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, এটি ফাইনাল ফর্মে দেয়ার পর আমাদের সঙ্গে আরেকবার বসবেন। এটি অত্যন্ত ইতোবাচক প্রস্তাব।
বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এই আইন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগগুলো আমরা বৈঠকে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, আইনে এমন কোনো ধারা যাতে না থাকে, যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়। এমন কোনো আইন যেন না হয়, যাতে সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়। আমরা আরো বলেছি, এই আইনে এমন ধারা থাকা উচিত, যেখানে সাংবাদিকতার বিষয়ে কোন ব্যত্যয় ঘটলে বা সাংবাদিকদের বিচারের ক্ষেত্রে অবশ্য যেন তা কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হয়। প্রেস কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত নেবে তারা সাংবাদিকতা করেছে না অপসাংবাদিকতা করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যে কয়টি ধারা সম্পর্কে বলা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে আমারাও একমত। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল অপরাধ দমন করার জন্য, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি অথবা স্বাধীনতা খর্ব করা বা সংবিধানের কোনো ধারাকে লঙ্ঘন করার কোনো ইচ্ছা নিয়ে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে না।